পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

অকারণে হরতাল ভাংচুর কিংবা হুমকি নয় জনগণে বিশ্বাস রাখুন

কামাল লোহানী


আমাদের দেশের বিরোধী ১৮টি দলের নেত্রী মাদাম খালেদা জিয়া আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের কাছে সরকারের নামে নালিশ করে বোধহয় ‘বালিশ’ পেয়েছেন। সেই বালিশ ফাটিয়ে ফেলেছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার জনসভায়। ফাটা বালিশের তুলো উড়িয়ে কী অসাধারণ উক্তিই না করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আগামী ৪২ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’... এই না হলে দেশের নেত্রী, দলের ম্যাডাম! কী চমৎকার হিসেব-নিকেশ কষে বলেছেন ৪২ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০ নয়, ৩০ নয় ৪০ও নয়, একেবারে নিখুঁত হিসেব করে ৪২ বছর পেলেন কোত্থেকে? এ হিসেব কোথাকার, কে দিয়েছে? সত্যিই সাধুবাদ দিতে হয় তাঁকে, কী চমৎকার অঙ্ক মিলিয়েছেন তিনি। এতদিন পর্যন্ত কোন নেতাই বলার সাহস করেননি, এই তো সেদিন হিলারির সঙ্গে ‘গুফতোগু’ হওয়ার পর নিখুঁত হিসেব জনগণের সামনে তুলে ধরলেন মাদাম জিয়া। একথা তাঁর মুখেই মানায়, কারণ তিনিই একমাত্র মহিলা। যিনি সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল জিয়ার হত্যার সুযোগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে বিকৃত তথ্য ও অসত্য ভাষণ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে নির্বাচনে ভোট পাবার কসরত চালাচ্ছেন। অথচ জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকার সময় বঙ্গভবনে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে অভ্যাগত তিন ভদ্রমহিলা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন না খালেদা, এতই লাজুক ছিলেন। মিশুক ছিলেন না। এমন দৃশ্য দেখে দূরে অতিথিদের সঙ্গে আলাপরত জিয়া তাঁর স্ত্রী খালেদাকে কিছু একটা বলার জন্য তাঁর কাছে যান এবং বলে আবার অতিথিদের কাছে চলে আসেন। পরে ঐ ভদ্রমহিলাদের একজনার কাছ থেকে শুনেছিলাম, খালেদা জিয়া কথা না বলে দূরে একা দাঁড়িয়ে থাকায় জিয়া এসে তাঁকে শাসনের সুরে ভদ্রমহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। সেই খালেদা জিয়াই আজ হাজার হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে ‘৪২ বছর’-এর মতন তার স্বপ্নের কথা বললেন। বলবেনই তো, এখন তো তিনি জিয়ার স্ত্রী সুবাদে রাজনীতি-সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকায় সাময়িক কিছু চমক দিয়ে জিয়া ভোলাতে চেয়েছিলেন মানুষকে। দেশবাসীও মেজর থেকে জেনারেল হওয়া জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও সময়কালীন কাহিনী-কর্মকা- কিছুই জানতেন না বলে জিয়াকে খুব সহজভাবেই গ্রহণ করেছিলেন। তার পেছনে আরও একটি কারণ ছিল, সে হলো, মেজর জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে তাঁর জোয়ানদের নিয়ে পাকিস্তান থেকে সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়া জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করার হুকুম তামিল করার জন্যই চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে ব্যারিকেড দেখে এগুতে না পেরে বন্দর শ্রমিকদের গালিগালাজ করেছিলেন এবং বন্ধুর মাধ্যমে বাঙালিদের ‘ডিসআর্ম’ করার খবর পেয়ে পালাবার সিদ্ধান্ত নেন। সীমান্ত অভিমুখে রওনা হন কিন্তু গ্রামবাসীরা পথরোধ করে ওদের পালাবার পথ বন্ধ করে দেন। ফলে ফটিকছড়িতেই থাকতে হয়েছিল। এদিকে বেতার ও শহরের সংস্কৃতি কর্মীরা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে পূর্ববাংলার শোষণ মুক্তির ঘোষণা দেন উপাধ্যক্ষ আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। পক্ষে বক্তৃতা করেন সাংবাদিক আব্দুস সালাম। আরও কেউ কেউ। কিন্তু বেতার কর্মীদের মধ্যে সচেতন যাঁরা, তাঁরা ভাবলেন এই যুগসন্ধিক্ষণে একজন বাঙালি সামরিক অফিসারের কণ্ঠে যদি কোন আহ্বান বা তাদের সমর্থনের আভাস দেয়া যায় তবে বিপর্যস্ত বাংলার জনগণের প্রত্যয় সুদৃঢ় হবে। তাই বেতার উদ্যোক্তাদের একজন বেলাল মোহাম্মদ গিয়ে আশ্রিত গ্রাম থেকে তাঁকে শহরে নিয়ে আসেন। তাঁকে অনুরোধ করা হলে তিনি সুযোগ পেয়ে ‘আর্মি ক্যু’র ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এতে সাধারণভাবে বেতার সংশ্লিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী নেতাদের উদ্যোক্তারা বিব্রতবোধ করলেন। তাঁকে ডেকে আনাই হলো বাঙালি সৈন্যরাও এই বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে সমর্থন করছেন, তা জানিয়ে দেয়ার জন্য। অথচ তিনি সুযোগ বুঝে ‘প্রভিশনাল সরকার’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বেতার সংগঠকরা তো বটেই তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যে এটা ক্যু নয়, এ মুক্তিযুদ্ধ। এমনকি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনকালে শিল্পমন্ত্রী একে খান এম আর সিদ্দিকীকে ডেকে বলেছিলেন, তাকে গিয়ে বলো, এটা আর্মি ক্যু নয়, রাজনৈতিক যুদ্ধ।
বহু কসরতের পর বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যে বিপ্লবী শব্দ ছিল, তা বাদ দিতে বললেন এবং তারপর একাত্তরের ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মহান নেতা মেনে তাঁর নামেই স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণাটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেছিলেন। ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ আমরা সবাই মেনে নিয়েছি, কিন্তু বিএনপি দাবি করছে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক’ এবং ২৬ মার্চ জিয়া এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। অবশ্য জিয়া জীবদ্দশায় তাঁর কোন বক্তৃতা বা লেখায়ও এমন দাবি কখনও করেননি। আর আওয়ামী লীগ কেন দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন এ দাবি অসত্য, অসার। কারণ যে কোন মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বাধীনতার লড়াই কিংবা বিপ্লব যেভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তা থেকে আমরা যা অনুধাবন করি যে, এমন কোন ঘোষণা সুনির্দিষ্টভাবে সেদিন আসেনি বা মেলেনি কোনভাবেই। মুক্তিযুদ্ধ বা বিপ্লব শুরু হয় সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই। একাত্তরে এমন কোন সিদ্ধান্ত ছিল কি? একাত্তরের মার্চ ছিল জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে উত্তাল এবং পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল জনসাধারণ তাই রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে দারুণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। তার পেছনে সবচেয়ে বড় এবং তাৎক্ষণিক কারণ ছিল, সামরিক শাসকদের দেয়া সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অকল্পনীয় বিজয় জাতীয় ও পূর্ববঙ্গ পরিষদে কিন্তু পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক শক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানী রাজনীতির প্রাসাদ ও সামরিক চক্রান্তকারী সিন্ডিকেটের ছিল না। কারণ যেভাবেই হোক তারা পূর্ববঙ্গের বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি ছিল না। তাই কথা দিয়েও শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ করতে চায়নি। ফলে মানুষের মনে জমে ওঠা ক্রোধের সঙ্গে ন্যায্য অধিকার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি মিলে দেশবাসী বাংলার জনগণকে মুক্তির পথে হাঁটতে বাধ্য করেছিল। অর্থাৎ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায়ই তো এই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির সৃষ্টি। যেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বই ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ বিশেষ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও। তাই রাজনীতিই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল এবং দেশের সকল মানুষই এ ভূমিকায় প্রধান শক্তি বা নায়ক। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, মুক্তিযুদ্ধ তাই রাজনৈতিক নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়। বাংলার অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ঐ সময় বাংলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এবং আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে অনিশ্চিত ও বিচ্ছিন্ন অবস্থাকে যূথবদ্ধ উদ্দেশ্যে নিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে সহায়তা কামনা করেন। কিন্তু এই উদ্যোগ আওয়ামী লীগে মুশতাক সমর্থক এবং যুব ও ছাত্র নেতৃত্ব গ্রহণ করতে চাইল না। এমনকি তাজউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে হিসেবে গ্রহণ করতে চাইল না। চ্যালেঞ্জ করতে আগরতলায় দলের বিশেষ অধিবেশন কাউন্সিল ডেকে বসলেন। কিন্তু সংগঠন পর্যায়ে তাজউদ্দিনের যে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এবং জনপ্রিয়তা ছিল, বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন হিসেবে, তার কাছে অনাস্থা উত্থাপনকারীরা হেরে গেলেন।... বহু চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাজউদ্দিন আহমদই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘সচিবালয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন মন্ত্রিসভার অন্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যৌথভাবে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকালে সরাসরি রণাঙ্গনে মুক্তি সেনাদের সঙ্গে থেকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই পর্যায়ে দেশ এবং পরদেশেও তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা মুক্তিযুদ্ধকে সফল পরিসমাপ্তির পথে নিয়ে গিয়েছিলেল এই তাজউদ্দিন আহমদই। আমরা তাঁর নেতৃত্বেই বিজয়ী হয়েছি এ কথা অনস্বীকার্য।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খোন্দকার মুশতাকরা ফাঁক-ফোকর খুঁজে ভেতরটাকে ‘ফোকলা’ করে দেবার যে তৎপরতা চালিয়েছিল, তাজউদ্দিন সাহেবের দৃঢ় মনোবলের এবং মুক্তিফৌজের অসম সাহসিকতা ও বিজয়াভিযানের ফলে তাকে ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিল বটে, কিন্তু পরাশক্তি ঐ সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার কোন মুক্তিযুদ্ধকেই কোনদিন সমর্থন জানায়নি, তাই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরও প্রবল বিরোধিতা করেছিল। মুক্তি ফৌজের বিজয়ে আপাতদৃষ্টিতে মার্কিনীরা পিছিয়ে গিয়েছিল, তা বলা যাবে না। বরঞ্চ গোপনে খাল কাটছিল। তারই ফসল হিসেবে দেখলাম, ধর্মনিরপেক্ষতার সেøøাগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ-বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ইসলামী দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে বাধ্য হলেন। মুক্তিযুদ্ধের চিরশত্রু আমেরিকান প্রশাসন-শাসকগোষ্ঠী যেন পেয়ে বসলো বাংলাদেশকে। আর বিগত চল্লিশ বছরে কত না ফন্দিতে নবীন রাষ্ট্র ও নেতৃত্বকে কতভাবে বেকায়দায় ফেলে কব্জা করার মতলব এঁটেছে। আজ তারই খেসারত প্রতিনিয়ত দিয়েই চলেছি। ...ওদের চরিত্র দুধারী তলোয়ারের মতন অথবা ‘দোদিল বান্দা’র বলা যায়। ‘চোরকে চুরি করতে বলে গেরস্থকে সজাগ থাকতে বলে।’ দুনিয়ার সর্বত্রই একই নীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে বিক্রি করার জায়গা খুঁজতেও ওদের যুদ্ধের প্রয়োজন। তাই যুদ্ধ বাঁধিয়ে দুই দেশকেই যুদ্ধাস্ত্র সাপ্লাই দিতে ওস্তাদ। সেই আমেরিকান প্রশাসন আজও আরামসে ঘাড় মটকে খেয়ে যাচ্ছে। তাদেরই বর্তমান চক্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এসেছিলেন চীন আর ভারত সফরে। মাঝখান দিয়ে বাংলাদেশেও ঢুঁ মেরে গেছেন। এই সুযোগ নিয়ে খালেদা জিয়া ‘নালিশ’ করেছেন সরকারের বিরুদ্ধে।... আচ্ছা, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিদেশের কাছে নিজেদের ‘হাঁড়ির খবর’ বলে আমরা কি লাভ পাই, কিন্তু কেন করেন? এতে কি দেশের সম্মান বাড়ে? যদি না বাড়ে তবে কেন জনগণকে এভাবে অপমান করেন? মনে রাখবেন, জনগণ অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত। চোখ বন্ধ করে থাকবেন না। ভাববেন না, চোখ যখন বন্ধ এখন কেউ দেখতে পাচ্ছে না।... আমরা কিন্তু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। কারণ আমাদের কোন সার্থকতা নেই, কিন্তু আপনারা তো ক্ষমতাকে টার্গেট করেই রাজনীতিও করেন। ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া আর কোন কথা ভাবতেও পারেন না। আর ক্ষমতায় যাবার জন্যে যা খুশি করতে আপনাদের বাধে না। সে কারণে যার যা খুশি তাই বলেন, একে অপরের বিরুদ্ধে। নিজের দেশের প্রতি যদি সত্যিই আনুগত্য থাকে তবে কেন অন্যের ওপর নির্ভর করেন? কেউ টাকা না দিলে দেশ চলবে না এটা মনে জায়গা পায় কেন? আমরা কি আদৌ দরিদ্র। না রাজনৈতিক কারণে গরিব বানিয়ে রাখা হয়েছে? 
এমনই মানসিকতা আপনাদের মনে বাসা বেঁধেছে। কারণ আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা ও ক্ষমতারোহণ করার মদদ বা শক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকেই পেতে চান। কখনও বা মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে সৌদি আরব ও প্রতিবেশী দেশগুলোর অর্থসম্পদ বোধহয় আপনাদের আকৃষ্ট করে। তাই আপনারা একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ করে ফায়দা হিসেবে ক্ষমতায় গেলে তাদের সাহায্য নিয়ে যেন কাজ করতে পারেন। ...সে কারণেই দেখি, মার্কিনীরা মন্ত্রী বা তস্য মন্ত্রী কিংবা আন্ডার সেক্রেটারি যখন আসেন, তথা ক্ষমতাসীন সরকার যেই থাকে, তারাই উন্মাদ হয়ে যান। কত যে নিরাপত্তাই না নেয়া হয়, কত যে তার স্তর থাকে! তাতেও ভরসা পায় না। নিজের দেশ থেকেও এক দঙ্গল নিরাপত্তা বাহিনী পাঠায় বেশ কয়েকদিন আগে। এটা কি আমাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদাকে ক্ষুণœ করে না? জনগণকে অবমাননা করা হয় না? আমাদের নিরাপত্তা নেই অথচ ওদের শুধু শুধু শ্যাম এলেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায় সর্বত্র। তা সত্ত্বেও মার্কিনী কোন প্রেসিডেন্ট একটি রাতও কাটায়নি। দিনে ঢাকায় কাটিয়ে নিরাপত্তার জন্য দিল্লীতে থাকতে হয়েছিল ক্লিনটনকে। কারণ এতসব পদক্ষেপ নিয়েও তার নিরাপত্তা নিñিদ্র নাকি হয়নি। ... জানি না, কেন ভয় ওদের মনে? কারণ বিশ্বের দেশে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে, অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করে, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে নানা কৌশলে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদী ও ‘গণতান্ত্রিক’ বলে দাবিদার দলের ওপর সওয়ার হয় এবং বাম বিরোধী কমিউনিস্ট প্রভাবিত জোট গঠন করে তাদের শায়েস্তা করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ‘ভেট’ দেয়। 
ওরা নিজেদের গুরুত্ব আমাদের মনে চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ‘বিক্রি’ হতে বাধ্য করে। আমরা অবশ্য বিক্রি হওয়ার জন্য রেডি হয়েই বসে থাকি। তাই তটস্থ হয়ে ওদের আদর-আপ্যায়ন, খানা-পিনা, আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার স্মারক, ঋণ চুক্তি ইত্যাদি স্বাক্ষর করে একেবারে বিকিয়ে দিই নিজেদের। দেশের বিভিন্ন সরকারই ঐ মার্কিনীদের মদদেই তো কট্টর কমিউনিস্ট চক্রকে সন্ত্রাসী বলে নস্যাত করে দিয়েছে। তাহলে এত ভয় কেন? তবে কি ভয় ওদের তাড়া করে বেড়ায়? কারণ মানুষকে বিশ্বাস করতে পারে না এবং যারা মানুষের পক্ষে তাদের সহ্য করা তাদের ধাতে সয় না। এদেশে তো ‘সন্ত্রাসী’ কমিউনিস্টরা নেই। প্রকাশ্যে যারা কমিউনিস্ট বলে পরিচয় দেন, তারা তো সশস্ত্র বিপ্লবেও বিশ্বাস করেন না। তারা স্বাত্তিক সেজেছেন। 
তাই বলছিলাম, হিলারি এসে ঢাকার রাজনীতিতে যে হাওয়া দিয়ে গেছেন, তাতে ক্ষমতার পক্ষ-বিপক্ষ উভয় দলই বেশ ‘দোদুল দোলনায়’ দুলছে। জাতীয় সঙ্কটে ওরা তো কাছে কখনও আসে না। এখন যে বিপদ আমরা ভাবছি, তাতে তাদের কোন তাপ-উত্তাপ নেই। বরঞ্চ হিলারির ‘হিলারিয়াস ট্যু’র তাদের বেশ আনন্দই দিয়েছে। কিন্তু মমতা প্রসঙ্গে যে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিল, তা কিন্তু তিনি করতে পারেননি অর্থাৎ তিস্তার ব্যাপারে তাঁকে আমাদের পক্ষে নয় সত্যের বাস্তবের পক্ষে আনতে পারেননি। মমতার মমত্ববোধ এখন আর এই বাংলাদেশের দিকে নেই। কারণ সামনের নির্বাচনের দিকে তার নজর। তাই সিপিএম ২৫ হাজার কিউসেক পানি যদি চেয়ে থাকে তবে তিনি চাইছেন ৫০ হাজার। অথচ তিস্তায় অত পানি আছে কি? এমন উদ্ভট দাবি তুলে মমতা তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইন অব্যাহত রাখছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তাই হিলারিও ‘রা’ করেননি। 
খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই সুপ্রিয় পাঠক, মমতা কিভাবে ভেল্কি দেখিয়ে হিলারিকে ভজিয়ে ফেলেছেন। খেয়াল করে দেখবেন, কংগ্রেস চাইছে প্রণব মুখার্জী ভারতের বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি তিনি হবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন প্রণব নয় মীরা কুমারি হবেন। এমনটি অন্য কোন রাজ্যসরকার করেনি। এই যে বিরোধিতার জোর কোথা থেকে পেলেন মমতা? নির্বাচনের আগে থেকে মার্কিনী মদদ যেভাবে তাকে শক্তি যোগান দিয়ে আসছে, তাতে তিনি কংগ্রেসকেই অগ্রাহ্য করতে চাইছেন। এমনকি জোট থেকে বেরিয়ে আসার হুমকিও দিয়েছেন।... তেমনি আমাদের দেশের বিরোধী দল তথা বর্তমান অষ্টাদশী চক্র (১৮ দল)-এর বিশাল নেত্রী খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে গোহারা হেরে এমনি ক্ষেপেছিলেন ভোটারদের ওপর যার বর্ণনা দেয়ার দরকার নেই। সবাই আমরা জানি, যে ক’জন ভোট নিয়ে সত্যি সত্যি জিতেছেন, তারা যে কারণে জিতেছেন, অর্থাৎ মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের ভোট নিয়েছেন, সেই কাজটাই তারা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সংসদেই যাচ্ছেন না, লোকজন তো এর জন্যই ভোট দিয়েছিলেন। এতে করে যে ভোটদাতা জনসাধারণকেই অপমান করা হচ্ছে, তা তারা জেনেও নিজেদের কর্তৃত্ব খাটাবার মওকা খুঁজছিলেন। সরকারী দলের বড় কয়েকটি ব্যর্থতাই বিরোধী দলকে আবার সাধারণ মানুষের কাছে যেতে সাহস যুগিয়েছে। আর সামনেই নতুন নির্বাচন আসছে তাই দেখছি লবিং করে নতুন করে ক্ষমতায় যাবার আশায় রাজপথে নেমে হরতাল দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে, জ্বালিয়ে, ভাংচুর করে, ‘জনদুর্ভোগ’ সৃষ্টি করে জনগণেরই সমর্থন চাইছে ওরা। এই রাজনীতির অবসান হবে কবে? মানুষ তবেই না স্বস্তি পাবেন?
বিদেশীদের কাছে নালিশ করলে ওরা পেয়ে যে বসে তাইতো গত ৬০/৬৫ বছর ধরে দেখে আসছি। ঐ পথ ত্যাগ করে নিজের দেশের সম্পদ বিপুল জনগোষ্ঠীকে নির্ভর করুন, তাঁদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুন, তবেই সকল সংকট থেকে রেহাই পাবেন।

লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

কোন চক্রান্তে অপরাধী ধরা যা”েছ না?




কা মা ল লো হা নী
সাগর-র“নী দুটো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক-রিপোর্টার ছিলেন। সুনামও অর্জন করেছিলেন কাজের কারণে। সততার সঙ্গে ব¯‘নিষ্ঠ সাংবাদিকতাই তারা করতেন। ওরা রাস্তায় দুর্ঘটনা কিংবা পুলিশের পিটুনিতে মারা যাননি। রাজধানী শহরে নিজের ফ্ল্যাটেই দু’জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে দুর্বৃত্তদের হাতে। যে পুলিশ যখন-তখন সাংবাদিকদের পেটাতে ব্যস্ত এবং ‘সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না’ জানে, সেই ‘কর্মক্ষম’ পুলিশ-র‌্যাব, গোয়েন্দারা তাদের হত্যাকারীদের ধরতে তো পারেইনি, খোঁজও দিতে পারছে না। হাইকোর্ট যে রিপোর্ট চেয়েছে, তাও কি ঠিকমতো দেয়া হ”েছ?
দীপংকর চক্রবর্তী, মানিক সাহা কিংবা হুমায়ুন কবীর বালু ও আরও অনেককেই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাতে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাদেরইবা কী হয়েছে? তবে সাগর-র“নী হত্যাকাণ্ডকে অনেকেই পরিকল্পিত বলে মনে করছে। শোনা কথা, গুর“ত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহই নাকি করেছিলেন ওরা। তাই তাতে র“ষ্ট যারা, তারাই তাদের হত্যা করিয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড তো আর ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেরা করে না। ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে কাজ খতম করে। এক্ষেত্রে অনেকেই শুনি বলছেন অনুমান করে, ওভাবেই নাকি সাংবাদিক দম্পতিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কারা খুনি, তা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ সব এজেন্সি। কিš‘ কেন? এতগুলো এজেন্সি, এত সব কঠিন রহস্য পর্যন্ত উদঘাটন করে ফেলছে, এটা কেন পারছে না? তখনই তো সাধারণ সচেতন মানুষের মধ্যেও সন্দেহের উদ্রেক করছে। আমরা দীর্ঘদিন রাজনীতি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারছি না, তারা কেন পারছে না রহস্য উদ্ঘাটন করতে? অনেকেই বলছেন, ‘সর্ষেয় যদি ভূত’ থাকে, তবে হবে কী করে? আবার কেউ কেউ বলাবলি করছেন, কাজটা যাদের দিয়ে সংশ্লিষ্টজনরা করিয়েছে, তারা সেদিনই তাদের বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। টিকিট-ফিকিট নাকি আগেই করা ছিল। তাহলে তারা নিশ্চয়ই কারও বা সন্ত্রাসী-ভাড়াটিয়াদের কথা বলছে। এর কোনটাই কেন নিরাপত্তা বাহিনীর পারঙ্গম অফিসার বা গোয়েন্দা দল বের করতে পারল না? তবে কি ‘ইন্টারেস্ট’ কাজ করছে এর পেছনে?
সাগর-র“নী দু’জনেই ভালো রিপোর্টার ছিলেন। দু’জন কর্মরত ছিলেন দুটি বড় টেলিভিশনে। তারা কেন বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া করছে না। কেবল র‌্যাব-পুলিশের ওপর নির্ভর করলেই কি এর ফয়সালা হয়ে যাবে? সাংবাদিকরাই শুধু আন্দোলন করে যা”েছন। আর বিরোধী দল এর সুযোগ নিয়ে রাজনীতির ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্ষমতাসীন দল ও নেতৃবৃন্দ এমনকি প্রধানমন্ত্রী ‘আনপ্যালাটেবল’ মন্তব্য করছেন। যার ফলে জনসাধারণ্যে সন্দেহ নানা শাখা-প্রশাখায় গজিয়ে উঠছে। এটা বর্তমান সরকারকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করার পথ রোধ করে দি”েছ। সাংবাদিকদের বেডর“ম পাহারা দিতে কেউ কাউকে বলেছে বা সাংবাদিক ইউনিয়ন দাবি করেছে বলে আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ কেন এমন ক্ষিপ্ত হলেন, অমন মন্তব্য করলেন? এটা কিš‘ এই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কেউ আশা করেনি। বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আল্লার মাল আল্লাহই নিয়ে গেছে’। ওরা এমন বলতেই পারেন। কারণ জনগণের সঙ্গে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করে ওরা তো রাজনীতিতে আসেননি। ওরা জনগণের দুঃখ, মা-বাবার সন্তান হারানোর বেদনা বুঝবেন কেমন করে? প্রধানমন্ত্রীর মনে কষ্ট আছে মা-বাবা, ভাই, ভ্রাতৃবধূসহ অগণিত পৈশাচিক হত্যার প্রত্যক্ষ যন্ত্রণা ভোগের। একবার ভাববেন কি প্রধানমন্ত্রী, ওই শিশু মেঘের মনটা কেমন করছে সেদিনের বিভীষিকাময় রাতের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে!
তাই এ হত্যাকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমন মন্তব্যে সবাই বিচলিত হয়েছেন। আমরা সাংবাদিকরা অবশ্যই কোন সরকার, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীকে কারও ‘বেডর“ম’ পাহারা দিতে বলি না। বলি দেশের ভেতর সেই শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে, যে পরিবেশে এমন নৃশংস সন্ত্রাসী কাণ্ডকারখানা ঘটতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো এমন অনেক হত্যাকাণ্ডে ছুটে গেছেন ক্ষতিগ্রস্তের বাড়ি পর্যন্ত। সান্ত্বনা দিয়েছেন, বুকে টেনে নিয়েছেন স্ত্রী-সন্তানদের। এতে তাদের যন্ত্রণা অনেকটাই লাঘব হয়েছে। কিš‘ এক্ষেত্রে আপনি এমন নিষ্ঠুর মন্তব্য কেন করলেন বুঝতে পারলাম না। এই আপনিই তো নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর মন্ত্রিসভা গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা শুর“র সময়ই পিলখানার নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। তখন তো সুযোগ বুঝে বিরোধী দল নানা চক্রান্ত শুর“ করেছিল এমনকি সেনাবাহিনীর মধ্যেও উস্কানি দিতে চেষ্টা করেছিল। কিš‘ আপনি আপনার সহকর্মী ও রাজনৈতিক অন্য সহযোগী নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ তর“ণ সেনা অফিসারদের বিষোদগারকেও মোকাবেলা করেছেন। সান্ত্বনা জানিয়েছেন। বিপুল ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন এবং অব্যাহত সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়েছেন। সেখানে তো আপনি অমন ‘অযৌক্তিক উ”চারণ’ করেননি। কেন? কারণ, যাদের হত্যা করা হয়েছে, তারা দেশের সম্পদ।
একথা তো সুস্পষ্টভাবেই আমরা জানি, সেনাবাহিনী একটি সুশংখল, সংঘবদ্ধ, প্রশিক্ষিত বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে তাদের বীরত্বপূর্ণ অবদান গৌরবগাথা হয়ে রয়েছে। তাই তো জাতির সাত বীরশ্রেষ্ঠই সেনাবাহিনীর। আপনি তো জানেন, মুক্তিযুদ্ধ শুর“ই করেছিলেন এদেশের জনসাধারণ। কতিপয় বিশ্বাসঘাতক, কুলাঙ্গার ধর্মান্ধ অপশক্তি এর বিরোধিতা করেছিল। তাছাড়া সব কৃতিত্বই জনগণের। আজও কিš‘ সেই মূল্যায়ন করা হয়নি। এদেশের সাংবাদিক সমাজ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন কোন বাহিনী নয়, কিš‘ ইতিহাসের পাতা উল্টালেই অধ্যায়ের পর অধ্যায় চোখে পড়বে কী প্রচণ্ডভাবে এই সুশিক্ষিত সাহসী কলমযোদ্ধারা পাকিস্তানি দুঃশাসনের বির“দ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং ওই ২৩ বছরের দুঃশাসনে কত না নিপীড়ন-নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনা, জেল-জুলুম এমনকি হত্যা ও হত্যার শিকার হয়েছিল তবু তারা দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তানিদের বির“দ্ধে লড়াই করে গেছেন। দেশে রাজনীতির সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক সংঘবদ্ধতাও এক প্রবল শক্তি ছিল সব আন্দোলনে। সুসংগঠিত সাংবাদিক ইউনিয়ন যে অবদান রেখেছিল সেই পাকিস্তান জমানায়, এমন নজির কি আর আছে ছাত্র, শ্রমিক জনতা ছাড়া? কিš‘ তারা কি কোন প্রাপ্য চেয়েছে?
প্রধানমন্ত্রী, আপনি সরকারপ্রধান। দেশচালিকার সর্বো”চ শক্তি। আপনি একবার বিবেচনা করে দেখুন, ইতিহাস পাঠ কর“ন, দেখবেন কত লাঞ্ছনা-গঞ্জনাই না সহ্য করতে হয়েছে সাংবাদিক সম্প্রদায়কে। আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়াও জাতীয় সংকট-দুর্যোগ, প্রাকৃতিক বৈরী পরি¯ি’তি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ভাষা আন্দোলন থেকে শুর“ করে দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামÑ সব লড়াইয়ে সাংবাদিকরা ছিলেন অন্যতম প্রধানশক্তি। আজও তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে দিবস-রজনী কাজ করে যা”েছন। অথচ আজ তারাই নির্মম শিকার চক্রান্তের, সন্ত্রাসের, দুর্ঘটনারও। দেশে সরকার থাকলে এসব ঘটনার সমাধান তো তাদেরই করার কথা। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মতো সর্বো”চ আসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব যদি ‘বেডর“ম পাহারা’ দেয়ার মতো উক্তি করেন, তখন আমরা সাংবাদিকরা যাই কোথায়? তাও তিনি যদি হন শেখ হাসিনা?
দীপংকর, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু, সাগর-র“নীÑ এমন আরও অনেকে খুন হয়েছে সন্ত্রাসী-চক্রান্তকারীদের হাতে। তাদের কেন বিচার হয় না? দেশে যখন ‘গণতান্ত্রিক’ নয় কেবল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার থাকে, তখন তো এমন অবিচার, চক্রান্ত, দুর্বৃত্তায়ন আশা করি না। অন্তত যে মামলা হয়েছে বা পরিবার যে সাহস দেখিয়েছেÑ তারা তো আইনের বিচার চেয়েছে, আর কিছুই চায়নিÑ তবে কেন অনীহা, অবিচার আজও অব্যাহতভাবে চলছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পিলখানার নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, যেখানে একসঙ্গে ৫৮ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচার কিš‘ শুর“ হয়ে গেছে। জওয়ানদের, বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের বিচার হ”েছ, শাস্তি হ”েছ। কিš‘ কেন একই সরকার জনগোষ্ঠীর সচেতন সাংবাদিক সমাজের ‘হতভাগ্য’ সদস্যদের বিচার তো দূরের কথা, তদন্ত করে কোন হদিস পা”েছ না? এ কি এতই দুরূহ ব্যাপার? তাহলে সরকারের নানা গোয়েন্দা, নিরাপত্তা এজেন্সি আছে কেন? এরা তো এই জনগণের অর্থেই লালিত-পালিত। সে জনগণের অংশ সাংবাদিকরাও।
সাংবাদিকরা ‘গঙ্গার জলে ধোয়া তুলসীপাতা’Ñ এ কথা আমি বলব না। কারণ গণবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরাও এই সম্প্রদায়ে আছে। তাই তো এদেশের আরেক ‘মহান নেত্রী’ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বিভক্ত করে দুটি ইউনিয়ন বানিয়ে দিলেন। সেই থেকেই সাংবাদিক সম্প্রদায় বিভাজিত। একে অপরের বির“দ্ধে লেগেই থাকে। ফলে সংবাদপত্রগুলোতে মালিকরা ইউনিয়ন গঠন করতে দেয় না। সব পত্রিকায় ইউনিয়ন এখন আর আগের মতো নেই। শুধু ‘ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ’ ঘোষণা করাই তো সরকারের কাজ নয়। কে বাস্তবায়ন করল, তাও তো সরকারের দেখা প্রয়োজন। সে ধরনের মনিটরিং সেল সরকার গঠন করেছে বলে জানি না। ইউনিয়ন যদি ‘বার্গেনিং’ এজেন্ট হিসেবে সর্বত্র থাকত, তাহলে সরকারেরও সুবিধা হতো এবং সংবাদপত্র মালিক ও কর্মচারীদের জন্য সু¯’ পরিবেশ থাকত। ঘরেই ‘বার্গেন’ করার অধিকার যাদের নেই, তারা কী করে পুলিশ তথা সরকারের কাছ থেকে তাদের অধিকার আদায় করবে? ইউনিয়ন শক্তিশালী হলে সংবাদপত্র জগতের অধিকার, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতাও সংরক্ষণে লড়াই করা সম্ভব হতো।
পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের চিরশত্র“তা। এ আজ নয়, সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা পত্তনের পর থেকেই এই ক্ষমতার দাপট পুলিশ দেখিয়ে যা”েছ। ব্রিটিশ আমলে কিংবা পাকিস্তানি শাসনামলেও আমরা সাংবাদিক ইউনিয়ন সংগঠিত শক্তি হিসেবে কাজ করেছি বলেই যার মালিকানাধীনই হোক না কেন, আমরা দেশমুক্তির লক্ষ্যে বহু সংগ্রামের সঙ্গেই সম্পৃক্ত হতে পেরেছি। দু’একটি পত্রিকা যে বিরোধিতা করেনি, তাও নয়। কিš‘ ইউনিয়ন ছিল ঐক্যবদ্ধ, তাই সব সদস্যই ছিলেন একমতের। আজ সেই সংঘবদ্ধতা নেই। ফলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হ”েছন। সংবাদপত্র এখন যেন রাজনীতির দলীয় প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হ”েছ। আগে এমন ছিল না। তাই সংবাদপত্র নয়, সাংবাদিকরাই পুলিশের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়েন সব সময়, বিশেষ করে রিপোর্টার আর ফটোগ্রাফার-ক্যামেরাম্যানরা।
পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা এখন অবাধে অঘটন ঘটিয়ে যা”েছ কিš‘ তার প্রতিকার কেউ, কোন সরকারই করছে না। খালেদা জিয়া তো ইউনিয়নই ভেঙে দিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছেন। কিš‘ বর্তমান সরকারই বা কেন প্রতিকার করছে না? সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশের হাতে নিগৃহীত হওয়া যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। হত্যাকাণ্ডগুলোর কোন সুরাহা হয়নি বলেই তো এসি শহীদুল বলতে পেরেছে, ‘পেটা শালা সাংবাদিকদের, সাংবাদিক পেটালে কিছু হয় না।’ সত্য কথাই বলেছে ওই ‘সন্ত্রাসী এসি’। ফটোগ্রাফারদের নির্মমভাবে পেটানোর পর সরকারি ভাষায় ‘প্রত্যাহার’ করা হয়েছিল ওই এসিকে, আর কনস্টেবলদের সাময়িক বরখাস্ত। পরে দেখলাম, এসিকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘ক্লোজড’ আর থাকেনি, ‘ওপেন’ হয়ে গেছে। তাহলে ওর বাড়াবাড়ি বাড়বে বৈ কমবে কেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আপনারা ক্ষমতায় আছেন বলেই পুলিশের সাফাই গাইবেন না। আপনারা যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এরা কী করবে, এখন বুঝতে পারছেন না।
পুলিশকে ‘জনগণের সেবক’ বললেই হবে না। তাদের মোটিভেট করে সেবক বানাতে হবে। না হলে তারা প্রশ্রয় পেয়ে আরও অঘটন ঘটাবে। অতীতে সাংবাদিকদের হেন¯’া, পিটুনি, গ্রেফতার, মামলা দেয়াÑ কতই না করেছে পুলিশ, কিš‘ খুব একটা শাস্তি হয়নি। এবারও দেখা যাবে, দিন বয়ে যাবে, অথচ কিছুই হবে না। যাতে এমন আচরণ পুলিশ না করে সেজন্য নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন, যা সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে বসে করলে তারাও বাধ্য থাকবে মানতে। সাংবাদিকদের প্রতি আচরণ না পাল্টালে রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কামাল লোহানী : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

জিএম ইয়াকুবের আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

কামাল লোহানী
জিএম ইয়াকুবের আজ (৩০ মে) প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। যে ইয়াকুব নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেছিলেন প্রদীপ্ত যৌবনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, সেই দক্ষ সংগঠনটিকে কেউ বুঝি মনেই রাখেনি কিংবা রাখতে চায় না। ইয়াকুব যখন সাংবাদিকতায় আসেন, তখন ছিল জাতির জীবনে এক মাহেন্দ্রক্ষণ। গোটা পূর্ববঙ্গবাসী মুক্তির লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করেছে এবং এই মহতী লড়াইয়ে এই ব্যক্তিটির কী অসাধারণ অবদান ছিল তা আজ কারও মনে থাকতে না পারে, কিন্তু তার ভূমিকায় কোন ছেদ ছিল না। সাংবাদিকতা বিষয়টিকে বেছে নিয়েছিলেন জিএম ইয়াকুব জীবনমুক্তি আর সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে। আন্তরিকতা আর দেশপ্রেম তাকে প্রবলভাবে উৎসারিত করেছিল।
জিএম ইয়াকুবের মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সারে, সেও মাত্র এক বছর। কিন্তু মনে হয় যেন তাকে ভুলে গেছেন সবাই। ভীষণ ক্ষোভ তার স্ত্রীর। যে মানুষটি এমন ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিক ইউনিয়নকে সময় দিয়েছেন, সহকর্মীদের ভালবেসেছেন, শ্রদ্ধা করেছেন, সেই মানুষটি একেবারে ‘অচেনা’ কেন হয়ে গেলেন? তুরস্কের বিপ্লবী কবি নাজিম হিকমত আজ থেকে বহু বছর আগেই বলেছিলেন, ‘মানুষের শোকের আয়ু মাত্র দশ দিনের।’ মানুষের কবি, সমাজ বদলের মহান যোদ্ধা, জীবন বাস্তবতায় বিশ্বাসী আদর্শিক রাজনীতির এই লড়াকু কবির কথা আজ আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের লড়াই করেই বাঁচতে হবে। সবাই যখন মুখ ফিরিয়ে নেবে, তখন নিজেকেই দৃঢ় সংকল্প নিবদ্ধ করতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতি দুর্দান্ত প্রতাপের দেশে মানুষের বিপণœতা কারো মনে দাগ কাটে না। এখন বুঝি এমনি সমাজব্যবস্থা এবং মানুষের মন।
জিএম ইয়াকুব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যেমন ছিলেন তার পাঁচ ভাইও। বড় দুু’জনকে তো আমি চিনতাম, তাদের মন-মানসিকতা, আদর্শিক চিন্তা-ভাবনার কারণে। ইয়াকুবও তাই। হয়ত অন্যরাও বড়দের পথই অনুসরণ করেছেন। বড় ভাই আমাদের প্রিয়পাত্র ছিলেন। মোর্তজা আমার সমসাময়িক। বাষট্টিতে জেলও খেটেছি একসঙ্গে। ওরা দু’জনাও নেই। ইয়াকুবও চলে গেছে স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে। বড় ছেলে তার বিয়ে করে সংসার জীবনযাপন করছে। ছোট ছেলেটি পড়াশোনা করছে, কিন্তু সঙ্কট সামনে এসে দাঁড়ালে হয়তবা হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাবে সেও। বাবা-চাচারাও তো সকল সঙ্কটকে মোকাবেলা করেই জীবন গঠন করেছিলেন। তাদের পরিণতি নয়, আদর্শকে ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। বাবা জিএম ইয়াকুব বা তাঁর মতো মানুষেরা শুধু ত্যাগ করেছেন। জীবনে কোন লোভ-লালসা তাঁদের ‘ছোট’ করতে পারেনি। ইয়াকুব ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং দক্ষ সংগঠক। ৯নং সেক্টরের সাহসী যোদ্ধা-মুক্তিসেনা।
সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দৈনিক সংবাদে। প্রথমে সংশোধনী বিভাগে, তারপর সহ-সম্পাদক পদে উন্নীত হয়েছিলেন। একমাত্র ‘সংবাদ’ এই সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। কিন্তু ইয়াকুবের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগে সংবাদ ছেড়ে দিতে হয় পত্রিকার অর্থ সংকটের কারণে। তারপর তিনি আর কোন পত্রিকায় যোগ দেননি। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অন্যতম সহ-সভাপতি ছিলেন এবং পরিষদ প্রকাশিত মাসিক ‘মুক্তি’ সম্পাদনার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জিএম ইয়াকুব মারা যাওয়ার আগে ঢাকায় ‘প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। তারও অভিভাবক হিসেবে ছিলেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে সংবাদ ইউনিটের ডেপুটি চীফ এবং পরে ইউনিট চীফ হন। তারও অনেক পরে তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৯৬ সালে রিপোর্টার্স ইউনিটের আয়োজনে শেখ হাসিনার হাত থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড যে বিজয় উৎসব পালন করে তিনদিন, সেখানে ইয়াকুব আমন্ত্রিত হয়েছিল ২০০৭ সালে।
এই জিএম ইয়াকুব সম্ভবত জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়ই সাংবাদিকতার সংস্পর্শে আসেন। এ সময় ছাত্রনেতা হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে প্রথম গ্রেফতার হন। পরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও যখন মার্কিনী চক্রান্ত অব্যাহতভাবে চলছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হলো, তার পরপরই ইয়াকুবও বহু বঙ্গবন্ধু অনুসারী এবং মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কারাবরণ করেন।
খুবই পরিতাপের বিষয়, জিএম ইয়াকুব একজন নিবেদিতপ্রাণ মুক্তিসংগ্রামী ছিলেন পাকিস্তান আমলে দুঃশাসনবিরোধী গণআন্দোলনের শরিক হিসেবে। শুধু কি তাই, মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরে সাহসিকতার সঙ্গে দেশমাতৃকার জন্য লড়াই করে ছিলেন জানকে বাজি রেখে। কিন্তু মৃত্যুকালে এই মুক্তিযোদ্ধা যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে সমাহিত হননি। এমনকি তাঁর যে মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ছিল সেটিও ১৯৮৮ সালের সর্বগ্রাসী বন্যায় বিনষ্ট হয়ে গেছে। পরে এই সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে নতুন করে সনদপত্র জারি করার জন্য আবেদন জানানো হয় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে। আজ পর্যন্ত সেই সনদপত্র সোনার হরিণ হয়েই রয়ে গেছে তাঁর পরিবারের কাছে। জিএম ইয়াকুব প্রগতিশীল নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো জাতির, দেশবাসীর সবারই অহংকার, গর্ব। সেই গর্বে উদ্দীপ্ত হতে চায় পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম। যে পরিবারের পাঁচ ভাই-ই মুক্তিযোদ্ধা, তাদেরই একজন জিএম ইয়াকুব। তাঁরই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তাঁর উত্তরাধিকারীরাও গর্বিত হতে চায়। আর সে প্রাপ্তিটুকুও এই গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকেই পেতে চায়।
কিন্তু এমনি এক নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিককর্মীর দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামের সাহসী যোদ্ধা, যার অস্ত্র ঝলসে উঠেছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯নং সেক্টরের রণাঙ্গনে, তারই পাকস্থলিতে ধরা পড়ল ক্যান্সার। সে তো ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১। এই তো গত বছর মাত্র। বারডেমে ভর্তি করা হয়েছিল কারণ ডা. আজাদ খান বলেছিলেন, তাঁকে অপারেশন করতে হবে। কিন্তু ভর্তি হবার পর দেখা গেল অপারেশন করার পর্যায়ে নেই তাঁর অবস্থা, ফলে বাড়িতে নিয়ে আসার পর ৩০ মে ২০১১-তে তিনি পরলোকগমন করেন। প্রচুর অর্থব্যয়ে চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারেও নেমে এসেছে অর্থ সঙ্কট। বন্ধুদের যৎসামান্য সাহায্য পেলেও এখনও তার ধকল দূর করতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া।

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি


কা মা ল লো হা নী 
রক্তোৎপল বাংলাদেশ। এর একটি অংশে রয়েছে প্রতিবেশী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ। ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবই এক। কিন্তু দেশ বিভাগের প্রয়োজনে ইংরেজরা বঙ্গভঙ্গের যে পরিকল্পনা নিয়ে সেদিন প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়েছিল, সেটাই কার্যকর করল চার দশক পরে, ১৯৪৭ সালে তথাকথিত ¯^াধীনতার টোপ রাজনীতির প্রধান দুই দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং নিখিল ভারত মুসলিম লীগের মতৈক্যে। আমাদের মাতৃভ‚মি পূর্ববঙ্গের মানুষ ‘পাকি¯—ান’ সৃষ্টির জন্য ‘লড়কে লেঙ্গে পাকি¯—ান’ ¯ে­াগানে আপ­ুত হয়ে প্রচুর পরিমাণে ভোট দিয়েছিলেন। জিন্নাহ সাহেব ছিলেন মুসলিম লীগের প্রধান। তার বক্তব্য ছিল, পাকি¯—ান হবে সব ধর্মের মানুষের বাসস্থান। অথচ এ খুব বেশিদিন গেল না, আমরা পূর্ব বাংলার মানুষ সংখ্যায় অনেক বেশি ছিলাম, পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমাš— প্রদেশ এবং বেলুচি¯—ানের সর্বমোট তিন কোটির জায়গায় আমরা ছিলাম সাড়ে চার কোটি। প্রথমেই বাধা এলো ভাষার ওপর। মুসলিম লীগ শাসকচক্র তৎকালীন কোন অঞ্চলের ভাষা না হওয়া সত্তে¡ও ‘উর্দু’কে চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধাš— নিল। কিন্তু বাংলার দুরš— দামাল তর“ণ ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠল। চক্রাš— আর বিশ্বাসঘাতকতার পরিণামে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ছাত্ররা রক্তাক্ত ইতিহাস রচনা করলেন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সালাউদ্দিন, সফিউর প্রাণ দিয়ে মাতৃভাষার মান বাঁচালেন।
আমাদের যৌক্তিক দাবি ছিল : অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। সব আঞ্চলিক ভাষার সমান মর্যাদা চাই এবং সব রাজবন্দির মুক্তি চাই। 
১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যš— ভাষা সংগ্রাম অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯৫৬ সালে পাকি¯—ানের সংবিধান গৃহীত হলে তাতে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কার্যকরী কোন পদ¶েপই নেয়া হয়নি তখন। ফলে ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে হলে সংবিধান, পার্লামেন্ট সব বাতিল করে দেয় জেনারেল আইয়ুব খান। এই সামরিক জেনারেল দেশের (পাকি¯—ানের) সর্বময় ¶মতার অধিকারী হয়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের ওপর আঘাত করতে শুর“ করল। প্রথমেই একুশে ফেব্র“য়ারি যেন পালিত হতে না পারে তার জন্য চেষ্টা করতে থাকল, কিন্তু বাংলার সচেতন জনগোষ্ঠী এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিষেধাজ্ঞা উপে¶া করে মহান ‘শহীদ দিবস’ পালন করে। এ হ¯—¶েপ কার্যকর করতে না পেরে ১৯৬১ সালে কবিগুর“ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জš§শতবর্ষ যাতে পালিত হতে না পারে তার জন্য বেতারে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। শুধু কি তাই, কোন শিল্পীই কপালে টিপ পরে গান গাইতে পারবে না। এছাড়া নানা ধরনের নিবর্তনমূলক আচরণ ও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকল। কিন্তু যে দেশে সাধ্য না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ, নজর“ল ও সুকাšে—র একসঙ্গে জšে§াৎসব করে এসেছে জনসচেতন বাঙালিরা, যে দেশের মুক্তি সংগ্রামে যাদের কবিতা, গান, নাটক, নৃত্যনাট্য ‘সাংস্কৃতিক লড়াই’-এর শাণিত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহƒত হয়েছে, সেই দেশে সুকাš— আজ একেবারে নির্বাসিত। মজার ব্যাপার, সেইখানে প্রকৃত আর øিগ্ধতার কবি জীবনানন্দ দাশ স্থান পেয়েছেন অনায়াসে। 
অথচ পাকি¯—ানি দুঃশাসনকে প্রতিহত করা কিংবা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও ঐতিহ্যবাহী লোকজ সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ঔপনিবেশিক চক্রাš—কে প্রতিরোধ করে নিজ¯^ কৃষ্টিকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশের সব মানুষই তো একাট্টা হয়েছিলাম। লড়াই করেছি সেই সাম্প্রদায়িক অপসংস্কৃতির ভাগাড়Ñ মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রমূলক ‘পাকি¯—ানি কালচার’-এর বির“দ্ধে। এ লড়াই ছিল লীগশাহী এবং সামরিক অপশাসন কালেও। সংস্কৃতি তখন মূল রাজনীতিকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করেছে প্রবলভাবে। সে সময়ের প্রতিবাদী সংস্কৃতি আয়োজনে এই তিন কবি ছিলেন প্রধান। তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছিল সুস্পষ্ট। ¯^দেশ প্রেম ছাড়া ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চক্রাš—কে র“খে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে এই তিন কবিÑ রবীন্দ্রনাথ, নজর“ল ও সুকাš—কে আমরা পথপ্রদর্শক হিসেবেই পেয়েছিলাম। কবিগুর“ পর্যš— জালিয়ানওয়ালাবাগের ফ্যাসিস্ট হত্যাকাÊের পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দেয়া উপাধি বর্জন করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করার নৃশংস অপচেষ্টাকে র“খে দিয়ে বাংলার রক্তিম প্রাš—রে নতুন যে লড়াইয়ের নিশান উড়েছিল, তাকে আরও বেগবান করতে কবিগুর“ই রচনা করেছিলেন অমিত দেশপ্রেমে উজ্জীবনের গানÑ ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’Ñ যা অবশেষে ব্রিটিশ চক্রাšে— খÊিত বাংলার পূর্বাংশের পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। যদিও তৎকালীন পাকি¯—ানি নিপীড়ন-নির্যাতনের বির“দ্ধে পূর্ববঙ্গের ¯^ায়ত্তশাসন থেকে মুক্তির সংগ্রামে রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অবশ্যগীত গান হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ‘সোনার বাংলা’। তখনকার যে কোন সভা-সমাবেশ কিংবা প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের অবশ্যগীত গান ছিল এটি। মুক্তিযুদ্ধকালেও ‘¯^াধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে এ গানটি অগণিতবার পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়াও ‘মর“বিজয়ের কেতন উড়াও’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’, ‘হিংসায় উš§ত্ত পৃথ্বী’, ‘সঙ্কোচের বিহŸলতায় নিজেরে অপমান’ এমন বহু গান।
আমাদের রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে বিদ্রোহী কবি কাজী নজর“ল ইসলামেরও গান, কবিতা নানাভাবে সমৃদ্ধ, শাণিত করেছে আমাদের আন্দোলনকে। আমরা তো ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে একদিন সুরারোপই করে ফেললাম। সুর সংযোজন করলেন দেশের প্রখ্যাত নজর“ল সঙ্গীত গায়ক গণশিল্পী শেখ লুৎফর রহমান। পাকি¯—ানবিরোধী আন্দোলনে নজর“লের যে গানগুলো গাওয়া হতো, তার মধ্যে ‘শিকল পরা ছল’, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’, ‘দুর্গম গিরি’, ‘চল চল চল’Ñ এ ধরনের অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমমূলক ও উদ্দীপনা-প্রেরণাউদ্দীপক গানই ছিল প্রধান। ‘কামাল পাশা’ কবিতাটি আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে সুর সংযোজন করেছিলেন শেখ লুৎফর রহমান এবং তিনিই গাইতেন এই জাগরণমূলক সাহসের গানটি। তার লেখা আমাদের কেবল উজ্জীবিতই করেনি, লড়তে শিখিয়েছে। র“টির দোকানে অনির্দিষ্টকাল শ্রম বিক্রি করে যে অভিজ্ঞতা ‘দুখু মিয়া’ সঞ্চয় করেছিল, তারই সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল সৈনিক জীবনে অর্জিত যুদ্ধবিরোধী, মানুষ হত্যার বির“দ্ধে প্রবল ঘৃণা, আর তাকেই উস্কে দিয়েছিলেন কমরেড মোজাফফর আহমদ। যার বিস্ফোরণ ঘটেছিল ‘নবযুগ’ পত্রিকায় তার সম্পাদকীয় ¯—ম্ভে। তাই তো তার রচনাবলীতে উঠেছে ‘অবাধ্যতার’ ঢেউ। তাই তো দেখি, মেহনতি মানুষের প্রতি কবির দৃঢ় অঙ্গীকার, তিনি রচনা করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গানের বঙ্গানুবাদ। এটাই তার রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। আমাদের ধারণা, নজর“ল কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের অনুসরণে যে গানটি রচনা করেছেন, সম্ভবত এটিই বাংলায় রচিত প্রথম গণসঙ্গীত। 
পাকি¯—ানি দুঃশাসন, শোষণ-পীড়নের বির“দ্ধে আমাদের সর্বাÍক সংগ্রামে এবং সর্বশেষ বাংলার মানুষের মুক্তিযুদ্ধেও বিদ্রোহী কবির রচনাবলী আমাদের প্রেরণা জাগাতে এবং লড়তে সাহস জুগিয়েছে নিরš—র। তাই তো কবিকে যেমন ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে, তেমনি তার কবিতা ‘চল চল চল ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ গানটিকে রণসঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। 
কিন্তু ব্যত্যয় ঘটেছে কবি-কিশোর সুকাš— ভট্টাচার্যের ¶েত্রে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে তার অবদানকে, কেন জানি না, একেবারে নির্বাসনে দিলাম। কোন ¶েত্রেই তার যে কোন অবদান বা ভ‚মিকা আছে, তা বেমালুম ভুলে গেলাম। সচেতনভাবেই যেন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এমনকি সাংস্কৃতিক আয়োজনের ¶েত্রেও এই সাহসী-তার“ণ্যদীপ্ত কবির বলিষ্ঠ উদ্ভাবন ও রচনাবলী আমাদের জীবন থেকেই অপসারণ করে ফেললাম। প্রগতিশীল সচেতন জনগোষ্ঠী যারা সত্যিকার মুক্তির লড়াইয়ে সংগ্রামী চৈতন্যকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, সুকাš— কেবল তাদের গÊিতেই আবদ্ধ হয়ে গেলেন। যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলাম। আমার তো অনেকের মতোই ধারণা হল, বিপ­বে বিশ্বাসী কবিকে যেন প্রশ্রয় দেয়া না হয়, সেজন্যই সচেতনভাবে তাকে বিসর্জন। 
পাকি¯—ানের মুসলিম লীগশাহীর নিপীড়ন শুর“ হওয়ার সময় থেকেই কবি-কিশোর সুকাšে—র অনন্য কাব্যসম্ভার আমাদের চেতনায় সংগ্রামের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। তার গান আমাদের নবনবীন জীবন গড়ার পথে ত‚র্য নিনাদের মতো ধ্বনিত হয়েছে। মানুষের আদত মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী তর“ণ এ কবির এই উপলব্ধি ছিল শোষণ-বঞ্চণার বির“দ্ধে। তাই শাšি—র পৃথিবী গড়তে নিরস্ত্র মানুষকে পর্যš— সংগঠন শক্তির ঐক্যে লড়ার তাগিদ দিয়ে গেছেন। শ্রেণী শোষণহীন সাম্যের সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি তার ¶ুরধার লেখনীকে প্রকাশ করেছেন সংঘবদ্ধ মানুষের প্রবল শক্তি হিসেবে। এই দ্ব›দ্ববি¶ুব্ধ, শোষিত পৃথিবীকে তিনি ‘শিশুর বাসযোগ্য’ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। 
আমরা তাই কবিগুর“ ও বিদ্রোহী কবির পাশাপাশি কবি-কিশোর সুকাš— ভট্টাচার্যের গণমুখী লেখা এবং চৈতন্য-জাগরণী কাব্যগাথা ও রচনাবলীকে নিরš—র অপরিহার্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছি পাকি¯—ানি শোষণ-যন্ত্রণার প্রক্রিয়াকে দূর করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার ল¶্য।ে তিনি তার কাব্যের জগতে সব ভাবালুতাকে পরিহার করে বা¯—ব জীবনে মানুষকে শোষণের সব অপশক্তির বির“দ্ধে রচনা করেছেন জ্বলে ওঠার সাহসী ও বলিষ্ঠ কাব্য। সেই সঙ্গে কবি শোষণ-বঞ্চনার প্রতীকী কাহিনী কবিতায় তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করেছেন এবং সংগঠিত শক্তিতে গড়ে ওঠার ডাক দিয়েছেন। তাই তো তার রচিত কবিতাকে মানুষের লড়াই-সংগ্রামের প্রয়োজনে গণসঙ্গীতে রূপ দিয়েছেন সুরকার। ‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি, জšে§ই দেখি ¶ুব্ধ ¯^দেশভ‚মি’ কিংবা ‘বিদ্রোহ আজ বিপ­ব চারিদিকে’-এর মতো সাহসী উচ্চারণ-আহŸান শুনেছি তার রচনায়। কিংবা ‘অভিযান’-এ এই দেশের মানুষের পোষণ-নিপীড়নকে অগ্রাহ্য করে জনতার বিজয় সূচনার অভিযান হিসেবে শোষিত মানুষের সম্মুখে চক্রাš—-দুর্ভি¶ের বির“দ্ধে ঐক্যের আহŸান নিয়ে হাজির হয়েছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী চক্রাšে—র কালে ভারতবাসীকে নিঃগৃহীত করতে যে প্রক্রিয়া চালানো হয়েছিল, তারই এক কাহিনী ‘রানার’ কবিতা, যাকে গানে পরিণত করে মানুষের জীবনের চরম দুঃখের বির“দ্ধে বিদ্রোহ করার আহŸান জানিয়েছেন। এখানে উলি­খিত গানগুলোয় সুর সংযোজনা করেছিলেন শিল্পী সংগ্রামী সলিল চৌধুরী এবং সব ক’টিতেই কণ্ঠ দিয়েছেন অমর কণ্ঠশিল্পী হেমš— মুখোপাধ্যায়। আন্দোলনের প্রয়োজনে আমরা কবির ‘বোধন’ কবিতার একটা অংশকে সুরারোপ করে গেয়েছি। সুরকার ছিলেন পাবনার এক সাধারণ গণশিল্পী শম্ভু জোয়ারদার, সেই পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকেই। আরও পরে দেশময় যখন পাকি¯—ানবিরোধী সর্বাÍক যুদ্ধের পূর্বাভাস ধ্বনিত হয়েছে, তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় গণসঙ্গীত সুরকার শেখ লুৎফর রহমান সুর করলেন, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ, জেগে জেগে উঠে পদ্মার উচ্ছ¡াসে, আমি পাই তার উদ্দেশ’। পাকি¯—ানবিরোধী গণআন্দোলনে সুকাšে—র এই গণসঙ্গীতগুলো মানুষের মনকে প্রবলভাবে দোলা দিয়েছে। সেই পঞ্চাশের দশক থেকে শুর“ করে যে কবির গান, কবিতা, গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্য গণআন্দোলনকে শোষণ-দুঃশাসনের বির“দ্ধে র“খে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ¯^াধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রবল প্রাণের অমূল্য সম্পদ ছিল মুক্তিফৌজের কাছে, জীবনকে বাজি রাখার লড়াইয়ে কিংবা অবর“দ্ধ বাংলায় পাকি¯—ানি দস্যু পিশাচদের আক্রমণ ও হত্যার আতংকে দিনরাত অতিবাহিত করা অগণিত মানুষের জন্য ছিল বাঁচার সাহস, প্রতিরোধের উজ্জ্ব¡ল শিখার মতো; যে কবির এ অবদান পাকি¯—ান শোষণ-শাসনের বির“দ্ধে নিরš—র ও সংকল্পবদ্ধ গণশক্তির অন্যতম মন্ত্র, সেই কবিকেই তো মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে আমরা নিত্যই পেয়েছিলাম সহযোদ্ধা হিসেবে। তাকে কেন আমরা সচেতনভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম, ঈপ্সিত মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই। তারই জায়গায় বসিয়ে দিলাম জীবনানন্দ দাশের নাম। তার ‘বনলতা সেন’ কেন বলি, বহু কবিতাই বাংলার প্রকৃতি, প্রেম ও জীবনকে উপলব্ধির সুযোগ করে দিয়েছে কাব্যগুণে। কিন্তু পাকি¯—ানবিরোধী লড়াইয়ে কি আমরা তেমন সক্রিয়ভাবে তাকে পেয়েছিলাম? সুকাšে—র সঙ্গে তাকে তুলনা করতে চাই না। কিন্তু অঙ্গীকার, রাজনৈতিক চেতনা ও মুক্তির উদ্দেশ্যে নিবেদিত কতটা হতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ দাশ?
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে গণসঙ্গীত শিল্পী-সুরকার অজিত রায় ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটিকে গানে রূপাš—রিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সম্ভবত ‘বনলতা সেন’ কবিতাটিও গান হয়েছিল। কিন্তু সেই গানগুলোকে বড়জোর দেশগান বলা যেতে পারে, ¯^দেশী কিংবা মুক্তিযুদ্ধের গান বা আন্দোলন-সংগ্রামের গান বলা যাবে না। তবে কেন সুকাš— হারিয়ে গেলেন, জীবনানন্দ দাশের কাছে। সুদীর্ঘ সংগ্রামী ভ‚মিকার কবিকে কেন বিসর্জন দেয়া হল প্রকৃতি ও প্রেমের কেবল কাব্যময়তার কাছে এবং কারা দিলেন? 
এ কি তবে রাজনীতির ভেতর রাজনীতিরই অন্য ধরনের চক্রাš— নাকি সিদ্ধাš—? যে কবি পাকি¯—ানকালে সংগ্রামের উপাদান তৈরি করে আমাদের বলিষ্ঠ ভ‚মিকা নিতে সাহস দিলেন, এমনই একজনকে প্রত্যাখ্যান করলাম কেন? এ কি মুক্তিযুদ্ধের চার ¯—ম্ভের কেবল বাঙালি জাতীয়তাবাদকেই প্রাধান্য দেয়ার জন্য? তবে কি একে তুলনা করতে পারি মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পনা ও পরিচালনাকারী তাজউদ্দীন আহমদকে অপসারণ করে খোন্দকার মোশতাক আহমেদকে পুষে রাখার জন্য। কারণ মোশতাক তো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্রাšে—র শিরোমণি ছিলেন আওয়ামী লীগ রাজনীতির মধ্যেই। এর পেছনে যে মার্কিন তোষণনীতিই প্রকট হয়ে উঠেছিল, আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা সত্তে¡ও। এ কেবল জাতীয়তাবাদী চরিত্র ধারণের কারণে? সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী তর“ণ কবির বৈপ­বিক চিš—া-চেতনা যেন মুক্তিযুদ্ধের পর আর প্রসারিত হতে না পারে, তারই জন্য? 
আমাদের দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চালিকাশক্তি ছিলেন সাধারণ মানুষÑ জনগণ। জনগণ সংগঠিত না হলে গেরিলা যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। তেমনি মুক্তিসংগ্রামও শক্তিশালী হয় জনতার প্রতিরোধে। সে কথা ভুলে গেলে যে বিপন্ন অবস্থায় পড়তে হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বর্তমান বাংলাদেশ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ¯ে­াগান, ধর্মনিরপে¶তা, সমাজতন্ত্র, এমনকি গণতন্ত্র পর্যš— বিসর্জন দিয়েছি। না হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুর“ করতে কেন এত বছর লাগল? কেন এবং কার নির্দেশে ওই বিচারে আমরা এগোয়নি? এতদিন প্রক্রিয়া শুর“ হলেও আমাদের মনে কেন সন্দেহ দেখা দিচ্ছে আদৌ সম্পন্ন হবে কিনা এ বিচার, নাকি দোরগোড়ায় পৌঁছে হাল ছেড়ে দিতে হবে? সেও বোধহয় একই কারণে। যে কারণে সুকাš—কে বিসর্জন দিতে কার্পণ্য করিনি, যে কারণে ধর্মনিরপে¶তাকে বাহাত্তরের সংবিধান থেকে বিসর্জন দিতে হাত সামান্যতম কাঁপেনি দেশের রাজনৈতিক নেতাদের। 
তাহলে এ প্রবণতা রাজনৈতিক ¶েত্রে যেমন দেশ ও দেশবাসীকে জিম্মি করে ফেলেছে, তেমনি যুদ্ধোš§াদ মার্কিন প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে একের পর এক ছোট-বড় নেতার পরামর্শ শ্রবণ করেই চলেছি। এই পরামর্শে যেমন অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হচ্ছে, জনগণের ভোগাšি— বাড়ছে, তেমনি দেশের পরনির্ভরশীলতা ক্রমে বেড়েই চলেছে। হিলারির আগমনে কী পরমানন্দেই না গণমাধ্যমে নানা কাহিনীÑ সফলতার কেচ্ছা তুলে ধরা হচ্ছে। এই কেচ্ছাই যে কেলেংকারি লেপটে দেবে জনগণের কপালে, তা তো দেশের সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন, নেতারা পারছেন না? কেউ কোমর বাঁধছেন ‘নালিশের তালিকা’ তৈরি করে ¶মতাসীনদের ধমকে দেয়ার আশায়। আবার সরকার তো নিরাপত্তার তিন-চার ¯—র নয়, নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। তবু আমেরিকার ‘জ্যামার’ দল হিলারি ও প্রণবের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় এসেছে। এই যে অবিশ্বাস ও প্রভুত্ব ফলানোর চেষ্টা, তা আজ নয়, মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় থেকেই চালিয়ে আসছে। আজ আমরা ওদের হাতেই বন্দি। ওরা যা বলবে, তাই শুনতে হবে। সুতরাং, বিপ­বে বিশ্বাসীদের মার্কিনিরা প্রশ্রয় তো দেবেই না, বর্তমান সরকারও তাদের লাই দেবে না।
কামাল লোহানী : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

বাহাউদ্দীন ভাই আপনাকে শষে সালাম


কামাল লোহানী
বাহাউদ্দীন চৌধুরী বুধবার ১৬ মে ২০১২ সন্ধ্যা ৭টায় মগবাজাররে কমউিনটিি হাসপাতালে শষে নঃিশ্বাস ত্যাগ করছেনে। মৃত্যুকালে এই ভাষা সংগ্রামী, লড়াকু সাংবাদকি এবং রাজনীতবিদি বাহাউদ্দীন চৌধুরীর বয়স হয়ছেলি ৮১ বছর। অশীতপির র্কমী-সংগঠক বাহাউদ্দীন চৌধুরী বরশিালরে খ্যাতমিান উলানয়িার জমদিার পরবিাররে সন্তান হয়ওে সব সময় সহজ-সরল জীবনযাপন করে গছেনে। অবসরজীবনে কংিবা বয়োবৃদ্ধকালে বাহাউদ্দীন ভাই কতবার যে কমউিনটিি হাসপাতালে গছেনে তার হসিবে নইে। তাদরে সবো যতœে, চকিৎিসায় সব বারইে ভাল হয়ে চলার মতোন সুস্থ শরীর নয়িইে ফরিে এসছেনে। সে কবেল কমউিনটিি হসপটিালরে পরচিালক ডা. কামরুজ্জামান এবং তাঁর সহযোগীদরে নরিলস চকিৎিসা সবোর কারণইে। আর একজনার কথা না বললইে নয়। সে হলো বহুবছর আগে লঞ্চে চলার সময় ক্রন্দনরত একটি ছোট্ট ময়েকেে পয়েছেলিনে মীনা আপা আর বাহাউদ্দীন ভাই। তাঁদরে কাছইে মানুষ হয়ছেনে এই কন্যাসম আঁখি চৌধুরী। থাকনে গুলবাগ।ে তনিইি তাঁর বাবাকে দখোশোনা করতনে এবং তাঁর কাছইে থাকতনে। ময়েটেরি বয়িে দয়িছেলিনে বাহাউদ্দীন ভাই ও মীনা আপা। ওর দুটি ময়ে।ে ওরা তাদরে নানার জন্য ব্যস্ত থাকত সব সময় আর বাহাউদ্দীন ভাইও ওদরে এত ভালবাসতনে যে কোথাও গলেে ওদরে দু’জনার জন্য একটা কছিু অবশ্যই নয়িে আসতনে।
মীনা চৌধুরী ছলিনে তাঁর স্ত্রী, তনিি এ্যাডমনিস্ট্রিটেভি স্টাফ কলজেরে প্রথম মহলিা পরচিালক ছলিনে। এক দায়ত্বিশীল সরকারী র্কমর্কতা ও বজ্ঞি প্রশক্ষিক হসিবেওে মীনা আপা র্অথাৎ প্রফসের আমনিা চৌধুরী সমধকি জনপ্রয়িতাও র্অজন করছেলিনে। তাঁদরে দুই পুত্র। একজন থাকে লন্ডনে অন্যজন নউিইর্য়ক।ে বাহাউদ্দীন ভাইয়রে শষেকৃত্য সম্পন্ন হয় বনানী কবরস্থান।ে রববিার রাষ্ট্রীয় র্মযাদায় বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। জমদিারতনয়, সাংবাদকি ব্যক্তত্বি, রাজনতৈকি সৎর্কমী এবং অজাতশত্রু ভাষা সংগ্রামী বাহাউদ্দীন চৌধুরী কনে এমন নরিবিলিতিে দনিে দনিে মৃত্যুর পথে চলে গলেনে, তনিি অবশ্যই প্রচারবমিুখ ছলিনে। অথচ এই মহৎপ্রাণ মানুষটইি কন্তিু নবপ্রতষ্ঠিতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশে সরকাররে তথ্য মন্ত্রণালয়রে প্রথমে যুগ্মসচবি এবং পরে ভারপ্রাপ্ত সচবি ছলিনে। এখানে একটি প্রশ্ন জাগ,ে বাহাউদ্দীন ভাই তো র্দীঘ ৭/৮ বছর ধরইে অসুস্থ ছলিনে। সঙ্কটাপন্ন হলইে কমউিনটিি হাসপাতালে র্ভতি হতনে। একটু সুস্থবোধ করলইে বাসায় চলে যতেনে। এভাবইে ঐ আগে যাদরে কথা উল্লখে করছে,ি তাদরে দখেভালইে কাটয়িে গলেনে। এর মাঝখানে মৃত্যুর আগরে দনি মন্ত্রী লতফি সদ্দিকিী তাঁকে দখেতে গয়িছেলিনে। কছিুদনি আগে একুশে চতেনা পরষিদরে সভাপতি আহমদ রফকি তাঁর ভাষা সংগ্রামরে সহযোদ্ধাকে দখেতে গয়িছেলিনে। কন্তিু তাঁর রাজনতৈকি ভূমকিা, সাংবাদকিতায় অবদান সত্ত্বওে কে বা কারা, এমনকি তথ্য মন্ত্রণালয়রে দায়ত্বিপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা র্কমর্কতা কউে কি চোখরে দখো দখেতে গয়িছেলিনে? এ নয়িে অবশ্য তাঁর কোন অভযিোগ ছলি না। অভমিান থাকলওে কোনদনি প্রকাশ করনেন।ি তনিি তো র্বতমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংগঠনরে সঙ্গে ঢাকা মহানগর এবং কন্দ্রেীয় নতেৃত্বওে ছলিনে। যে ‘ছয় দফা’ নয়িে এত র্গব এটি প্রণয়নে এবং আওয়ামী লীগরে কাউন্সলি মটিংিয়ে উত্থাপনওে তনিি সক্রয়ি ভূমকিা পালন করনে।
এ দশেরে ব্রটিশি সাম্রাজ্যবাদবরিোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী কমউিনস্টি সংগঠক কমরডে আব্দুস শহীদ ছলিনে তাঁর শ্রদ্ধয়ে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধরে প্রমাণ মলিছে,ে শহীদ ভাইয়রে স্মরণ সভায় বাহাউদ্দীন ভাইকে নয়িমতি উপস্থতি থাকতে দখেে এমনকি অসুস্থ থাকলওে হাসপাতাল থকেে অনুষ্ঠানস্থলে গয়িে হাজরি হতনে। শুধু কি তাই, র্সবস্বত্যাগী আব্দুশ শহীদরে পরবিার যখন সরকারী রোষানলে পড়ছেলি, তখন প্রায় অশীতপির এই অসুস্থ মানুষটকিে কি উদ্বগ্নিই না দখেছে,ি বহুকষ্টে শহীদ ভাইয়রে স্ত্রীর বহুকষ্টে বানানো অসমাপ্ত দোতলা ছোট্ট বাড়টিা রক্ষা করার জন্য। লখিছেনে কাগজ,ে অনুরোধ করছেনে সরকারক।ে সংশ্লষ্টি প্রতমিন্ত্রী যখন শহীদ ভাইয়রে বাড়ি পরর্দিশনে গয়িছেলিনে তখন বাহাউদ্দীন ভাইও ছলিনে। তাঁর হাত ধরইে তো প্রতমিন্ত্রী কথা দয়িছেলিনে, এ বাড়ি ভাঙ্গা হবে না। সে বাড়ি অবশ্য অবশষেে হাতরিঝলি প্রকল্প র্কতৃপক্ষ ভঙ্গেইে দয়িছে।ে তখন তাঁর কি না পারার কংিবা র্ব্যথতার অনুশোচনা লক্ষ্য করছে,ি তা ভুলবার নয়।
ভাষা আন্দোলনরে সূচনা সইে ১৯৪৮ সাল থকেইে। আর বাহাউদ্দীন চৌধুরী তখন থকেইে সংগ্রামীযোদ্ধা। তখনকার র্পূব পাকস্তিানে সচবিালয় অবরোধে যে প্রতরিোধ সংগ্রামরে সূচনা, সখোনইে বাহাউদ্দীন ভাইয়রে আবর্ভিাব। এ সময় তনিি ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়রে ছাত্র এবং ভারতীয় কমউিনস্টি র্পাটি সর্মথতি ছাত্র ফডোরশেনরে একজন সক্রয়ি র্কমী। আর্দশরে তাগদিইে অন্যায়রে বরিুদ্ধে রুখে দাঁড়য়িছেলিনে এবং গ্রফেতার হয়ছেলিনে। পুলশিী নর্যিাতনে তাঁর বাঁ হাত ভঙ্গেে যায়। অবশষেে মডেক্যিাল র্বোডরে নর্দিশে অনুযায়ী তাঁকে কারামুক্ত করা হয়। কন্তিু ১৯৪৯ সালে ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয় চর্তুথ শ্রণেী র্কমচারীদরে আন্দোলনরে সর্মথনে তাঁদরে সঙ্গে যোগ দয়োয় আবার গ্রফেতার হন। ৬ মাস পর মুক্তি পয়েছেলিনে। সাংবাদকিতার জীবনে প্রবশে করছেলিনে ছাত্রাবস্থায় সইে ৪৯ সালইে। তখন ইনসাফ নামে একটি দনৈকি পত্রকিা নবীনদরে সাংবাদকিতায় হাতখেড়রি জায়গা। বাহাউদ্দীন ভাই সহসম্পাদক হসিবেে ইনসাফে যোগা দনে। পরে চলে আসনে দনৈকি সংবাদ।ে কন্তিু আওয়ামী লীগরে অন্যতম প্রধান সংগঠক ইয়ার মোহাম্মদ খান ও সুহৃদরা মলিে যে পত্রকিা প্রকাশ করনে তার নাম ‘দনৈকি ইত্তহোদ’। এর সম্পাদক ছলিনে কাজী মোহাম্মদ ইদরসি এবং র্বাতা সম্পাদক বাহাউদ্দীন চৌধুরী। এই পত্রকিাটি তখনকার চলমান পত্রকিা প্রকাশনায় এক নতুন ধারা ও রুচি এবং পাঠকগ্রাহ্য পরবিশেনায় আলোড়ন সৃষ্টি করছেলি। কন্তিু এর কছিুদনি পরইে ১৯৫৬ সালে তনিি সরকারী চাকরি গ্রহণ করে দল্লিীতে পাকস্তিান দূতাবাসরে র্ফাস্ট সক্রেটোরি (প্রসে) পদে যোগদান করনে। কন্তিু একটা কথা বলে রাখা দরকার, তা হলো বাহাউদ্দীন চৌধুরী সাংবাদকিদরে লড়াই সংগ্রাম করে দাবি ও অধকিার র্অজনরে সংগঠন র্পূব পাকস্তিান সাংবাদকি ইউনয়িনরে একজন সংগঠক এবং ঢাকা প্রসেক্লাব (যাকে এখন জাতীয় প্রসেক্লাবরে র্মযাদায় অভষিক্তি করছে)ি এর প্রতষ্ঠিাতা সদস্য ছলিনে। 
আজকালকার নাট্যমোদী র্কমী সংগঠক কংিবা সংস্কৃতি মনস্কদরেও জানা প্রয়োজন য,ে পাকস্তিানরে সইে মুসলমি লীগ শাহীর র্দুবষিহ যন্ত্রণাদায়ক অভযিান বাঙালী দমন এবং ভাষা সাহত্যিকে অবমাননার যে চক্রান্ত করে ১৯৪৮ সালইে শুরু করছেলি, তাকে উপক্ষো করে যমেন বাংলাভাষার র্মযাদার জন্য জীবনপাত করতে দ্বধিা করনেন।ি বাংলাদশেরে র্অথাৎ তৎকালীন র্পূব পাকস্তিানরে সকল মানুষ, তমেনি সাহত্যি সংস্কৃতকিে পদদলতি করতওে ঐ শাসকচক্র উঠপেড়ে লগেছেলি। কন্তিু সকল রক্তচক্ষু উপক্ষো করে বাংলার অমতিতজে তরুণ ছাত্রসমাজ দশে মাতৃকার সম্মান রক্ষায় যমেন বুকরে তাজা রক্ত ঢলেে দয়িছেলি, তমেনি সচতেন প্রগতশিীল গণতান্ত্রকি শক্তওি তখন থকেইে সংগঠতি হয়ছেলিনে দশেরে লোকজ ঐতহ্যি ও র্পূব পুরুষদরে রখেে যাওয়া সাংস্কৃতকি উত্তরাধকিার সংরক্ষণ।ে এই অভযিাত্রার একজন উদ্যোগী পুরুষ ছলিনে আমাদরে শ্রদ্ধয়ে বাহাউদ্দীন ভাই। তাই সাংবাদকিদরে উদ্যোগে পঞ্চাশরে দশকইে ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়রে র্কাজন হলে মঞ্চস্থ করছেলিনে ‘নীল র্দপণ’ দীনবন্ধু মত্রিরে অনন্যসাধারণ নাটকট।ি পরচিালনা করছেলিনে তনিইি। তনিি অভনিয়ও করছেলিনে এই নাটকটতি।ে তখনকার দনিে ময়েরে ভূমকিায় ছলেদেরেই অভনিয় করতে হতো। একে কউে ময়েদেরে নাটকে আসবে দতিনে না। তমেনি আবার রাজনতৈকি নাটককে এড়য়িে চলতনে অনকেইে। 
তাই র্কাজন হলে ‘নীল র্দপণ’ নাটক মঞ্চায়ন ছলি এক বপ্লৈবকি ঘটনা, তাও আবার সাংবাদকিদরে উদ্যোগ, সম্ভবত, দুই তনিজন বাদে সাংবাদকিদরে অভনিয়ইে। নাটকে হয়ত পরর্বতীকালে আর কখনও সাংবাদকিতার গুরুদায়ত্বি পালন করার কারণে কোন ভূমকিা রাখতে পারনেন।ি কন্তিু দশেীয় সংস্কৃতি বকিাশে তনিি বভিন্নি সাংস্কৃতকি সংগঠনরে সঙ্গে সম্পৃক্ত ছলিনে এবং সক্রয়ি সহযোগতিা প্রদান করতনে। 
বাহাউদ্দীন ভাই পাকস্তিান কন্দ্রেীয় সরকাররে পররাষ্ট্র বভিাগে দায়ত্বি পালন করছেনে কন্তিু বশেদিনি টকিে থাকতে পারনেন।ি কন্দ্রেীয় উপ-সচবিরে পদর্মযাদায় যথন তনিি আইনমন্ত্রী বচিারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহমিরে একান্ত সচবি হসিবেে দায়ত্বি পালনকালে সামরকি সরকাররে চাকরি থকেে পদত্যাগ করে সাংবাদকিতায় ফরিে আসনে। ন্যায়বচিার কামনা এবং অন্যায়রে প্রতবিাদ করা ছলি তাঁর মানসকিতা। পরর্বতীকালে তনিি আওয়ামী লীগরে রাজনীততিে সক্রয়ি হন। আইয়ুবী সামরকি শাসনরে পর আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবতি করা থকেে শুরু করে ৬ দফা প্রণয়নওে ভূমকিা রখেছেনে বাহাউদ্দীন চৌধুরী। দল পুর্নগঠনে কাউন্সলি আয়োজন থকেে ‘ছয়দফা’ প্রস্তাবনা র্পযন্ত সে সক্রয়ি ভূমকিা তনি পালন করছনে। তাঁর মাধ্যমে তনিি শখে মুজবিুর রহমানরে ঘনষ্ঠি সান্নধ্যিওে চলে আসনে। বাহাউদ্দনি ভাই সরাসরি মুক্তযিুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলওে অবরুদ্ধ বাংলাদশেে গোপনে সক্রয়ি ও সরাসরি সর্মথন অব্যাহত রখেছেলিনে নানাভাব,ে কারণ তাঁর মানসকিতা ছলি মুক্তযিুদ্ধরে পক্ষ।ে বাংলার মানুষ এবং নজি মাতৃভূমকিে মুক্ত করার আকাক্সক্ষা তাঁকে র্সবক্ষণ সচল রখেছেলি। তাই তো আমৃত্যু তনিি মানবমুক্তি এবং সাধারণ মানুষরে কল্যাণ চন্তিায়, অসুস্থতা সত্ত্বওে দনি কাটয়িছেনে। কোথাও কোন অন্যায় দখেলইে তনিি তাঁর কলমরে মাধ্যমে প্রতবিাদে সোচ্চার হয়ে উঠছেনে। 
একটি দৃষ্টান্ত নজিরে অভজ্ঞিতা থকেে দচ্ছি।ি প্রখ্যাত কমউিনস্টি ও সাংবাদকি শক্ষিক আবদুশ শহীদ মারা যাবার পর তাঁর পরবিার যে অসমাপ্ত একটি বাড়তিে মাথা গােঁজার ঠাঁই করে নয়িছেলিনে। তার ওপর কনে জানি না রোষবহ্নি পড়ল হাতরিঝলি প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কতৃপক্ষ রাজউক, গণর্পূত এমনকি সরকারে ‘লাল পতাকা’ উড়য়িে দয়ো হলো বাড়তিে র্অথাৎ এ বাড়ি ভাঙ্গা হব।ে অথচ এই বাড়টিি এই প্রকল্পরে নক্সার ভতের ছলি না। কন্তিু ভোজবাজরি মতো কোত্থকেে হঠাৎ করইে চলে এল। কত যে কাকুতি মনিতি করা হলো, প্রতমিন্ত্রী না ভাঙ্গার প্রতশ্রিুতি দয়িে গলেনে, কন্তিু তারপরও অমন নষ্ঠিুর নর্দিশে ও নম্নির্পযায়ে ধমক-হুমকি এমনকি প্রচ- র্দুব্যবহার চলতইে থাকল। আবদুশ শহীদরে স্ত্রী ভাঙ্গার সদ্ধিান্ত নলিে ‘আমরণ অনশন’ করবনে জীবনরে শষে সম্বল ও আবদুশ শহীদরে স্মৃতি রক্ষা করত।ে বসলনে প্রসেক্লাবরে সামন।ে আমরা অবাক হয়ে দখেলাম সহর্মমতিা ও একাত্মতা প্রকাশরে জন্য অসুস্থ বর্পিযস্ত বাহাউদ্দীন চৌধুরী গয়িে বসছেনে শহীদ ভাবরি পাশ।ে এ বাড়টিি ভাঙ্গাকে তনিি অন্যায়, অধকিার হরণ ভাবতনে বলে এই প্রতরিোধওে নামতে দ্বধিা করনেন।ি আমাদরে সহস্র চষ্টোয়ও সরকাররে মন গলল না। অবশষেে ভঙ্গেে ফলো হলো বাড়টি।ি বাহাউদ্দীন ভাই প্রচ- ব্যথা পয়েছেলিনে একটি গণতান্ত্রকি মুক্তযিুদ্ধরে সরকারে এমন সদ্ধিান্ত।ে দুঃখ প্রকাশ করবনে কার কাছ,ে বুকে চপেে রখেছেলিনে। বাড়টিি গলে, তনিওি চলে গলেনে ক’মাসে পরইে। 
মুক্তযিুদ্ধরে যে প্রখর চতৈন্যবোধ তাঁর ভতের কাজ করত, তা আজ ক’জনার মধ্যে কাজ কর?ে যে মানুষটি ছাত্রজীবনে ভাষা আন্দোলন থকেে নবপ্রতষ্ঠিতি বাংলাদশেরে জন্য আপন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে দশেইে মৃত্যুর প্রহর গুনলনে সাংবাদকিতা, ৬ দফার অন্যতম সংগঠক, সাংস্কৃতকি পরমি-ল হয়ে মুক্তসিংগ্রামরে সকল অধ্যায়ে তাঁকে মৃত্যুকালে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতওে সংশ্লষ্টিদরে র্কাপণ্য অনুসন্ধান মুক্তযিোদ্ধা তালকিার। ভাগ্যসি মহাজোট সরকার ছলি, তাই বুঝি শষে সালামটুকু পলেনে তনি।ি না পলেে কি থকেে যতেনে ঐ সম্মানরে জন্য? না। জীবনওে এমন মানসকিতা দখোননি তনি।ি যদি দখোতে পারতনে তবে তাঁকে তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সার চকিৎিসার জন্য র্সবস্ব বক্রিি করত হতো। ব্যবসা প্রতষ্ঠিান বর্সিজন দতিে হতো। মৃত্যুকালে স্বজনদরে থকেে দূরে পালতি কন্যা কংিবা সন্তানতুল্যদরে কাছ থকেইে শষে বদিায় নতিে হতো? 
বাহাউদ্দীন ভাই আপনাকে আমরা যর্থাথ সম্মান ও প্রাপ্য মূল্যায়ন করতে র্ব্যথ হয়ছেি বলইে আপনাকে প্রাণ দতিে হলো, তবে অনাদরে বলব না, কারণ কমউিনটিি হাসপাতাল, মামুন, আঁখ,ি শহীদ ভাইয়রে পরবিার তো ছলিনে, এই আমাদরে সান্ত¡না। জীবদ্দশায় যাঁকে মনে করনি,ি তাঁকে মরণরে পর কদনি স্মরণে রাখব, সে আশ্বাস মথ্যিা, প্রতশ্রিুতি আপনাকে দবে না। তবে আপনার সাহস অনমনীয়তা কছিু মানুষরে তো মনে থাকবইে। 
লখেক : সাংস্কৃতকি ব্যক্তত্বি

সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

অকারণ বচসা সৃষ্টি করে কী লাভ


কামাল লোহানী


ব্যারস্টিার রফকি উল হক। প্রবীণ আইনজীবী। র্দীঘদনিরে আইন ব্যবসায় অভজ্ঞি এক বাংলাদশেী নাগরকি। এই বয়সওে তনিি ব্যবসাই শুধু চালাচ্ছনে তাই নয়, ‘আদ্বীন’ নামরে একটি সবো প্রতষ্ঠিানরেও মালকি। সে এক বশিাল প্রতষ্ঠিান। হবে নাইবা কনে? যে বপিুল অঙ্ক তাঁর আয়, তনিি জময়িে রখেে করবনেটা ক?ি তাই ন্যায়নষ্ঠি মানুষ হসিবেে তা জনগণরে কল্যাণইে ব্যয় করছনে। সত্যইি কি বশিাল হৃদয় মানুষটা! আইনজ্ঞ হসিবেে তনিি বশে স্বনামখ্যাত তো বটইে। তনিি দারুণ নরিপক্ষে, পক্ষ- বপিক্ষরে হয়ে আইনরে ব্যাখ্যা প্রদান করে বচিারকদরে সামনে যুক্তর্তিক উপস্থাপন করে কাজটা হাসলি করনে বা করতে পারনে বলে সবাই তাঁকে যত বরিাট অঙ্কই হোক পতেে চান। র্কোটে তাঁর যশ-খ্যাতি সবই আছ।ে এই যুক্তর্তিকে যাঁদরে বজিয়ী করে মামলা ফয়সালা করে দনে তাঁরা তাঁকে প্রচ- মান্য করনে। এইসব মামলা মোকদ্দমার খবর লোকমুখে ছুটে বড়োয়, আবার সংবাদপত্ররে রপর্িোটাররে বদৌলতওে চাউর হয়ে যায় চর্তুদকি।ে তাই তাঁর মন্তব্য, বক্তব্য, ভাষণ কংিবা যুক্তর্তিকরে চমক সর্ম্পকে সকলে জাননে। শুনলে প্রীত হন। কউেবা উল্লসতি হন। কউে আবার ক্ষুব্ধ হয়ে থাকনে।
রববিার ১৩ মে সংবাদপত্রে প্রকাশতি তাঁরই এক বয়ানরে শরিোনাম করছেনে ‘বোঝনে আমরা কত বড় বকেুবরে দশেে আছ।ি’ ফটো র্জানালস্টি এ্যাসোসয়িশেন মলিনায়তনে গত শনবিার তাঁর এক একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। গুম, অপহরণ, রাজনতৈকি পরস্থিতিি নয়িে বক্তৃতা করতে গয়িে প্রবীণ আইনজ্ঞ ঐ মন্তব্য করছেনে। এ আয়োজন করছেলি মুক্তচন্তিা ফোরাম নামে একটি সংগঠন। ওরা মানবাধকিাররে পক্ষে কাজ কর।ে বাহ, চমৎকার এই উদ্যোগ! তাঁর বক্তৃতার বষিয়বস্তু শুনে আগ্রহভরে ঐ সভায় উপস্থতি ছলিনে কাদরে সদ্দিকিী এবং মজের জনোরলে (অব) সয়ৈদ মোহাম্মদ ইব্রাহমি বীরপ্রতীক। ওঁরা ব্যারস্টিার সাহবেরে সঙ্গে সংহতি জানাতইে নাকি এসছেলিনে। মারহাবা মারহাবা। গুম, অপহরণ সর্ম্পকে তনিি কথা তো বলতইে পারনে, কারণ তনিি তো আইনজীবী। এসব নয়িে মামলা-মোকদ্দমা হলে তো তাঁকে বা তাঁর সহযাত্রীদরেই পক্ষ-েবপিক্ষে লড়তে হবে নজি নজি মক্কলেকে জতোবার জন্য। এটাই স্বাভাবকি।
কন্তিু নোবলে বজিয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্ম্পকে দু’তনি জন মন্ত্রী যে মন্তব্য করছেনে তার কঠোর সমালোচনা করতে গয়িে ব্যারস্টিার হক যে ভাষায় র্বতমান সরকাররে দু’জন মন্ত্রী সর্ম্পকে অশালীন মন্তব্য করছেনে তা সত্যইি অবমাননাকর। তবে কবেল মন্ত্রী হসিবেে ব্যক্তরিই নয়, এঁরা দুজনাই স্ব স্ব ক্ষত্রেে র্অথাৎ রাজনতৈকি জীবনে স্বনামখ্যাত এবং অভজ্ঞি। এঁদরে ড. ইউনূসরে সঙ্গে কোন্ বোধে তুলনা করছেনে বুঝলাম না। তনিি সয়ৈদ আশরাফুল হকরে মন্তব্য নয়িে মনে হয় বশে মস্করা করছেনে। উল্লখ্যে, সয়ৈদ আশরাফ ইউনূসরে ‘নোবলে’ পাওয়া নয়িে বলতে গয়িে মন্তব্য করছেনে, “কোন যুদ্ধ বন্ধ না করইে তনিি শান্ততিে নোবলে পলেনে। নোবলে কভিাবে আসে তা আমাদরে এখানে অনকেইে জাননে। এ মন্তব্যে বজোয় খাপ্পা হয়ছেনে ব্যারস্টিার সাব। তনিি তো সাফসুতরা খাস দলিরে মানুষ, তাই আল্লাহর বান্দা কারও মনে কষ্ট হোক, তা তনিি চান না। তাই তনিি বলছেনে, (ব্যারস্টিার হকরে মন্তব্য) : তনিি একবোরে হাসরি কথা বলছেনে। একজন মন্ত্রী যদি বলনে, ড. ইউনূস যুদ্ধ থামালনে কবে যে শান্ততিে নোবলে পাবনে। একটি বড় দলরে নতো ও মন্ত্রী যদি বলনে, নোবলে পতেে হলে যুদ্ধ থামাতে হব।ে তাহলে বুঝুন, আমরা কত বড় বকেুবরে দশেে আছ!ি”
আমি শ্রদ্ধয়ে ব্যারস্টিার রফকি উল হককে জজ্ঞিসে করতে চাই, তনিি তো আইনরে লোক, এসব নয়িইে নাড়াচাড়া করনে। তনিি কি দখোতে পারবনে যসেব কারণে দশেে অশান্তি সৃষ্টি হয়, অতীতে হয়ছেÑে তার কোন ঘটনার বরিুদ্ধে প্রতরিোধে তো নয়ই, প্রতবিাদে ‘টু’ শব্দটি করছেনে? বশ্বিব্যাপী ষাটরে আমরেকিা যুদ্ধ, যুদ্ধাতঙ্ক, যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন ও দশে-েবদিশেে বক্রি,ি আর রাষ্ট্র-েরাষ্ট্রে নানা ধরনরে বরিোধ বাঁধয়িে যে মানুষ হত্যার র্কমকা- চালাচ্ছে এর কোন ঘটনা, র্দুঘটনার বরিুদ্ধে কোন মন্তব্য, বক্তব্য, প্রতবিাদ, ববিৃতি আদৌ দয়িছেনে? দশেরে ভতেরে যসেব অপঘাত. সংর্ঘষ, সন্ত্রাস চলছে বা অতীতে চলছলি, তার কোন প্রতবিাদ তনিি করছেনে? যে গুম, অপহরণ, রাজনতৈকি পরস্থিতিি নয়িে তনিি নজিে একক বক্তৃতা করতে গয়িছেলিনে সগেুলো নয়িে কি তাঁর কোন প্রতবিাদ জনগণ তো দখেনেইি, ব্যারস্টিার সাহবে কি দখেছেনে? ব্যারস্টিার সাহবে আপনি কি লক্ষ্য করছেনে ঐ ‘অমূল্য’ নোবলে পাবার পর ড. ইউনূস দশেে কটি সংর্বধনা পয়েছেনে এবং বদিশেে কত? এই ‘নোবলে পুরস্কার’ পাবার আগে এবং পররে ঘটনাপঞ্জি ঘঁেটে দখেলওে বুঝতে পারতনে কতটা ‘বকেুব’ বানয়িছেনে ড. ইউনূস দশেরে মানুষক!ে
যে কারণে ব্যারস্টিার হক প্রলুব্ধ ড. ইউনূসরে অবদান নয়িে বশিষে করে গ্রামীণ ব্যাংক বষিয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রসঙ্গে হয়তবা। ব্যারস্টিার সাহবে নশ্চিয়ই জাননে, গ্রামীণ ব্যাংকরে ক্ষুদ্রঋণ নয়িে কত শত পরবিার র্সবস্বান্ত হয়ছেনে? 
ব্যারস্টিার রফকি উল হক নজিকেে ‘যোগ্য’ ভাবছনে বলে কি অন্যকে অযোগ্য বলতে একটুও দ্বধিা করনে না। ব্যারস্টিার রফকি উল হক যমেন যোগ্য আইনজ্ঞ তমেনি অনকেইে আছে যোগ্য অথবা যোগ্যতম ব্যক্তত্বি এদশে।ে সবাই তো আর যোগ্যতার বচিার করার জন্য দায়ত্বি পালন করনে না। তনিি কি করে মন্ত্রী দলিীপ বড়ুয়াকে ড. ইউনূসরে ‘নখরে সমানও নয়’ বলে দাড়ি পাল্লায় দাঁড় করালনে। দলিীপ একজন মন্ত্রী এবং সাম্যবাদী দলরে প্রধান। মন্ত্রী হসিবেে তাঁর যোগ্যতা শল্পিশ্রমকি, শল্পিমালকি এবং সরকাররে প্রশাসনরে সংগঠন নশ্চিয় যাচাই করছ।ে দলিীপ ছাত্রজীবন থকেে প্রগতশিীল গণতান্ত্রকি আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছলিনে সক্রয়িভাবে এবং পাকস্তিানবরিোধী লড়াই সংগ্রামে আজীবন সংগঠক সনৈকি হসিবেে কাজ করছেনে। তাঁর যোগ্যতা নয়িে প্রশ্ন তুলে হক সাহবে কি তাঁকে খাটো করতে পরেছেনে, নাকি তাঁর নজিরে যে ইমজে তারই ক্ষতি করছেনে? দলিীপ বড়ুয়ার সঙ্গে রাজনতৈকি ফারাক থাকতে পার,ে তাই বলে তনিি যে এ দশেরে মুক্তি সংগ্রামে আজীবন সম্পৃক্ত ছলিনে তা তো অস্বীকার করা যাবে না। সে তুলনায় ড. ইউনূসরে কি তাঁর তুল্য যোগ্যতা আছ?ে বরঞ্চ ফখরুদ্দীন, মঈনউদ্দনিরে অবধৈ শাসনামলে তাঁকে দয়িে রাজনতৈকি দল গঠনরে যে প্রক্রয়িা চালাতে চষ্টো করছেলি ঐ সময়রে সামরকি-তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাতে তনিি তো ‘লজ্জাজনক’ভাবে অযোগ্য প্রমাণতি হয়ছেনে। তাহলে প্রশ্ন উঠে নাকি কসিরে যোগ্যতা ধরছেনে বচিাররে নক্তিি হসিবে?ে তবে তনিি শল্পিমন্ত্রীর ক্ষত্রেে শ্রদ্ধা রখেইে নাকি বলছেনেÑ নখরে যোগ্যও নয়। কি অসাধারণ মারপ্যাঁচরে কথা। শ্রদ্ধাভরে একজন মন্ত্রী ও রাজনতৈকি নতোকে অপমান করার চমৎকার কৌশল! তবে হক সাহবে এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রসিভার সকল সদস্যকে অবমাননা করছেনে, আপনি ভালই জাননে ‘জুতো মরেে গরুদান’ করার বাক্যট।ি এখানে অবশ্য ব্যারস্টিার রফকি আগে শ্রদ্ধা জানয়িে পরে অশ্রদ্ধা জাহরি করছেনে। ব্যারস্টিার রফকি মন্ত্রীদরে উদ্দশেে সবক দয়িে বলছেনে, ‘সম্মানতি ব্যক্তদিরে সম্মান জানালে নজিদেরে সম্মানও বাড়।ে’ এই বাক্যটি কি ব্যারস্টিার হকরে বলোয়ও খাটে না?
ড. ইউনূসকে নয়িে নোবলে পুরস্কার পাবার পর দশেরে বরণ্যে প-তি, লখেক-সাংবাদকিরাও বহু লখো লখিছেনে। তখন কি মন্তব্য করছেলিনে সমালোচকদরে বরিুদ্ধ?ে আমার অবশ্য খয়োলে পড়ছে না। এবার হঠাৎ ব্যারস্টিার রফকি এত কনে ক্ষপেে গলেনে বুঝতে পারলাম না। আমরা কি সত্যইি বকেুবরে দশেে বাস কর,ি ব্যারস্টিার সাহবে? না হলে বরিোধীদলীয় নত্রেী খালদো জয়িা যখন বলনে, ‘আওয়ামী লীগ আগামী ৪২ বছরওে আর ক্ষমতায় আসবে না।’ কংিবা ‘সাগর-রুনীর হত্যার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরবিার জড়তি’ বলে উল্লখে করে গাজীপুররে কাপাসয়িার জনসভায় বলনে, তখন কনে ব্যারস্টিার রফকি কোন মন্তব্য করনে না। এই যে মন্তব্য করার ক্ষত্রেে ভন্নিতা তা কি র্বতমান সরকাররে প্রতি বরৈী মানসকিতাই প্রকাশ পায় না? কারণ র্বতমান সরকার কংিবা মন্ত্রীদরে কারও কারও র্ব্যথতার ক্ষত্রেে যতটা সোচ্চার, ততটা তাঁকে বরিোধী দলরে র্কাযক্রমকে সমালোচনা করতে দখো যায় না। এই যে হরতাল হয়ে গলে, তাতে যে ৬ ব্যক্তরি মৃত্যু হলো, সে সর্ম্পকে কি তনিি কছিু বলছেনে? না বলে থাকলে কনে বললনে না? হরতালওয়ালাদরে প্রতি এত মমত্ববোধ কনে তাঁর? তবে হ্যাঁ ‘হাসনিা নোবলে পাওয়ার জন্য ঘুষ দয়িছেনে’ বলে বএিনপ’ির এখনও ভারপ্রাপ্ত মহাসচবি র্মীজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করছেনে তার নমি সমালোচনা করে ভারসাম্য রক্ষা করার প্রয়াস পয়েছেনে। কন্তিু তা যোগ্যতার বচিারে কন্তিু সমান হয়ন।ি ওটা বোধহয় একতরফা হচ্ছে ভবেে উল্লখে করছেনে। না, আমরা বুঝতে পরেছেি আপনার মনরে ইচ্ছা।
খালদো জয়িা ‘৪২ বছর’ কোন রাজনীতরি হসিবেে এমন মারাত্মক মন্তব্য করে ফলেলনে? আদৌ কি ভবেে বলছেনে? নাকি ভোটরে আবগেে গরম গরম বক্তৃতা দয়োর সুযোগ নয়িছেনে? ব্যারস্টিার রফকিরে মতো খালদো জয়িাও কি ‘বকেুব’ ভবেছেনে দশেরে মানুষক?ে যা বলবনে, বাংলার মানুষ তাই মনেে নবেনে। এমন বকেুব ভাবার কোন কারণ নইে, দশেরে সাধারণ মানুষকে যতই ব্যারস্টিার রফকি বকেুব বানাবার চষ্টো করুন না কনে। ব্যারস্টিার রফকি হয়ত বলতে পারনে তনিি জনগণকে বলনেনি ব্যক্তকিে বোঝাতে চয়েছেনে। তনিি বুদ্ধমিান আইনকৌশলে পারর্দশী, হয়ত তারই চমৎকারত্বিে শব্দটাকে বক্তৃতার বাক্যে ব্যবহার করছেনে। 
রাজনীতবিদি না হলওে যে কোন মানুষই রাজনীতি বোঝনে। তবে সবাই রাজনীততিে আসতে চান না। তাই বলে ক,ি দশেকে ভাল বাসনে না, এ কথা বলতে পারব? যমেন, ‘রাজনীতি করনে না বোধহয় ব্যারস্টিার সাহবে তারপরও কন্তিু রাজনীতÑি সরকার রাজনতৈকি আচরণ সর্ম্পকে তাঁর মত প্রকাশ করনে মাঝে মধ্যইে। সঠকি হোক বা বঠেকি হোক কংিবা উদ্দশ্যেপ্রণোদতি, লোকে যখন কাগজে পড়নে, তখন কন্তিু তাঁর মন্তব্য নয়িে মানুষও ভাবনে। ঐ যে ভাবনা এটাও কন্তিু রাজনীত।ি আমাদরে দশেরে মানুষ রাজনীতি বোঝনে। করনেও অনকে।ে তাদরে কন্তিু বকেুব ভাবলে নজিকেইে ‘বকেুব’ হতে হব।ে
তাই সবশষেে মাননীয় প্রধান আইনজ্ঞ ও ব্যারস্টিার রফকি উল হককে বলব, দশেবাসী সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করবনে না। এ দশেটা আমাদরে, এই দশেরে অগণতি মানুষরে রক্তরে বনিমিয়ইে কন্তিু বাংলাদশে আজ প্রতষ্ঠিতি। অস্থরি অশান্ত হবার কারণ ওই যে চহ্নিতি যুদ্ধাপরাধীদরে শাস্তি না দয়ো এবং যথাসময়ে না দয়ো, মান্যবর, সইেসব সময়ে আপনার বজ্ঞি মন্তব্য, পরার্মশ কোথায় ছলি? তখন তো আপনি আরও তজেী থাকবার কথা। সইে সময় যুদ্ধাপরাধীদরে বচিাররে পরার্মশ দতিে পারলনে না কনে? আপনি যদি দশেকে সত্যইি ভালবাসনে তবে যে কোন সরকারই হোক তাকে সৎ পরার্মশ দনি। কটু মন্তব্য করে অকারণ বচসা সৃষ্টি করে কংিবা পুরনো কাসুন্দী ঘঁেটে কি লাভ?
লখেক : সাংস্কৃতকি ব্যক্তত্বি